নিউজ একুশে ডেস্ক: ছবিতে দুজন মানুষের একজন হলেন মহান মানুষ এরশাদ আলী মোড়ল এবং অন্যজন ১৯৭১ সালে খুলনার চুকনগর গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া দুগ্ধপোষ্য সুন্দরীবালা।
এক মহান পিতা ১৯৭১ সালের ২১ মে চুকনগরের লাশের স্তূপ থেকে বুকে তুলে নেন পাকি বশংবদের বর্বরতায় সদ্য অনাথ ৫/৬ মাসের দুগ্ধপোষ্য কন্যাশিশুকে! তাকে নিয়ে মানবতার এক অমর গাঁথা আজ লিখছি!
নিজের বাড়িতে আজান, নামাজ কোরআন পড়ার পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুটিকে পূজা আর্চার মাধ্যমে তার পারিবারিক রীতিতে বড় করলেন, বিয়েও দিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী পাত্রের সাথে।
একাত্তরের ২১ মে বাড়িতে নিয়ে আদর, যত্ন, ভালোবাসায় পিতৃস্নেহে বড় করে বিয়ে দিলেন অচেনা সেই অনাথ শিশুকে।
সনাতন ধর্মের সাথে মিল রেখে নাম রেখেছিলেন রাজকুমারী সুন্দরীবালা।
বাড়ির কোণে ঠাকুরঘর তৈরি করে উঠোনে তুলসী গাছ রেখে পূজো আর্চা,গীতা পাঠ শিখিয়ে বড় করেছেন। একই ঘরে আযান এবং উলুধ্বনি একাকার হয়ে যায়।
রাজকুমারী সুন্দরীবালা বেড়ে উঠবার পর সনাতন সম্প্রদায়ের পাত্রের কাছে তার বিয়ে দেন কৃষক এরশাদ আলী মোড়ল।
১৯৭১ সালের ২০ মে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একসাথে ১০ হাজার নর–নারী এবং শিশুকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনী।
একাত্তরের বর্বরতম এ গণহত্যা সংঘটিত হয় খুলনা জেলার চুকনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর পাড়ে।
চুকনগরের প্রতিটি নারী–পুরুষকে একটি মন্দিরের সামনে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাযজ্ঞের একদিন পর লাশের পাহাড়ে পিতাকে খুঁজতে আসেন কৃষক এরশাদ আলী মোড়ল।
২১ মে ১০ হাজার নারী–পুরুষের রক্তাক্ত লাশের স্তুপ ঘেঁটে নিহত পিতার লাশ না পেয়ে শোকস্তব্ধ এরশাদ আলী চলে আসবার উদ্যোগ নিতেই শিশুর কান্না শুনে থমকে যান। তাকিয়ে দেখলেন, নিহত এক মহিলার বুকের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে একটি ক্ষুধার্ত শিশু আকুল হয়ে দুধ খুঁজছে! পিতৃস্নেহে আর্দ্র হৃদয়ে শিশুটিকে কোলে তুলে নিহত মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, মহিলাটির হাতে সাদা শাঁখা, মাথায় রক্তরাঙা সিঁদুর। সনাতন ধর্মের নিরীহ কন্যাশিশুটির বয়স ছিল তখন আনুমানিক ৬ মাস।
মহান এই বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো।
সূত্রঃ উৎপল কান্তি ধর, খুলনা।