নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হোটেল শ্রমিক মতিউর রহমানকে দ্বিখণ্ডিত করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করার দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিধবা বোনকে বিয়ে না করা ও ধারের ১ লাখ টাকা ফেরত না পাওয়ার ক্ষোভে কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মতিউর রহমানকে (৫৫) খুন করেন হোটেল মালিক হারিছ।
এ খুনের ঘটনায় হোটেল মালিক হারিছ মিয়াকে (৫০) নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করলে আসামি মতিউর এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন।
আসামি হারিছ মিয়া করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের সুলতাননগর গ্রামের মৃত আব্দুল হাফিজের ছেলে। নিহত মতিউর রহমান একই গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে। মতিউর রহমান স্থানীয় মরিচখালী বাজারে হারিছ মিয়ার খাবার হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।
আজ শুক্রবার কিশোরগঞ্জ পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হোটেল শ্রমিক হারিছ মিয়া ও হোটেল মালিক মতিউর রহমানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ৫-৬ বছর আগে মতিউরের স্ত্রী মারা যায়। সে কারণে মতিউর হোটেলের কাজ শেষে মালিক হারিছের সঙ্গে হোটেলেই রাত্রিযাপন করতেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মতিউর তার ছোট মেয়ের সংসারে ফার্ণিচার কিনে দিতে মালিক হারিছের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন।
এদিকে মালিক হারিছ মিয়ার বিধবা বোন রেজিয়াকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়েও বিয়ে না করেনি মতিউর। উপরন্তু প্রায় ২০ দিন আগে পার্শ্ববর্তী দড়ি গাঙ্গাটিয়া গ্রামের মৃত কাছুম আলীর মেয়ে দোলেনাকে বিয়ে করেন তিনি। এ ঘটনায় ক্ষোভ জমে হারিছের মনে।
হত্যাকাণ্ডের ৩ থেকে ৪ দিন আগে তার বড় মেয়ের জামাইকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে আবারও হারিছের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে মতিউর সিলেট চলে যান।
ফিরে এসে হারিছকে তিনি ওই টাকা হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান। হারিছ মিয়া এসব কারণে মতিউরের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত ২৪ মে দুপুরে মতিউর মরিচখালী বাজারে গিয়ে হারিছ মিয়ার সাথে বসে চা-পান খেয়ে তার শ্বশুর বাড়ি গাঙ্গাটিয়া চলে যান। ওইদিন রাতে আবারও হারিছ মিয়ার হোটেলে গেলে তাকে পরিকল্পিতভাবে কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায় হারিছ। মতিউর ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে মতিউরের দেহকে দ্বিখণ্ডিত করে লাশের উপরের অংশ সুলতাননগর গ্রামের গোরস্থানে বোন ছলেমন্নেছার কবরের পাশে রেখে দেন এবং নীচের অংশটি কাঁথা দিয়া মুড়িয়ে বস্তাবন্দী করে নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেন।
গত ২৭ মে দুপুরে লাশের ওপরের অংশ ওই গোরস্থানে পাওয়া যায়। এদিনই মতিউর রহমানের ছেলে মো. রমজান আলী বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা (নং-২৩) দায়ের করেন।
মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত হওয়ায় তাদের ক্রাইমসিন ইউনিট ছায়া তদন্তে নামে। অবশেষে পিবিআই বুধবার রাত আড়াইটায় নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের জিমটি বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে হারিছ মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে বৃহস্পতিবার আসামিকে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে হাজির করলে হারিছ মিয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন বলে পিবিআই জানায়।
এরপর বিজ্ঞ আদালত হারিছ মিয়াকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।