নিউজ একুশে ডেস্ক: অস্ট্রিয়ার মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ের সরকারী প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বকারী সর্ববৃহৎ সংস্থা ‘ইসলামিক রিলিজিয়াস অথরিটি ইন অস্ট্রিয়া’র (IGGÖ) কেন্দ্রীয় শূরা সদস্যদের ভোটে অথরিটির সুপ্রিম কাউন্সিল (ওবার্স্টেরাট) নির্বাচিত হয়েছে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) শূরা সদস্যদের ভোটে আগামী ৫ বছরের (২০২৪–২০২৮) জন্য এ কমিটি নির্বাচিত হয়।
‘ইসলামিক রিলিজিয়াস অথরিটি ইন অস্ট্রিয়া’ মূলত অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী টার্কিশ, বসনিয়ান, অ্যারাবিয়ান, আলবেনিয়ান, আফ্রিকান ও এশিয়ানদের নেতৃত্বাধীন প্রায় চারশ মসজিদ ও ইসলামিক সংস্থার সমন্বয়ে গড়ে উঠা দশটি বৃহৎ ইসলামিক কমিউনিটির (Kultusgemeinde) কেন্দ্রীয় সংস্থা।
দশটি ইসলামিক কমিউনিটির ১৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ইসলামিক অথরিটির সুপ্রিম কাউন্সিলে (ওবার্স্টেরাট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন টার্কিশ বংশোদ্ভূত আইনবিদ অমিত ভুরাল, ভাইস প্রেসিডেন্ট বসনিয়ান বংশোদ্ভূত আদিস ক্যান্ডিস ও টার্কিশ বংশোদ্ভূত এস্রেফ চাকমাক। কেন্দ্রীয় শূরা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এসাদ মেমিক।
তাছাড়া অ্যারাবিয়ান, আলবেনিয়ান, আফ্রিকান ইসলামিক কমিউনিটির পক্ষ থেকে একজন করে সুপ্রিম কাউন্সিলে (ওবার্স্টেরাট) নির্বাচিত হন।
এশিয়ান মুসলমানদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কাউন্সিলে (ওবার্স্টেরাট) তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন এশিয়ান ইসলামিক কমিউনিটির (Asiatische Kultusgemeinde) চেয়ারম্যান বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী হাসিম মোহাম্মেদ। কেন্দ্রীয় শূরা সদস্যদের ভোটে আরো নির্বাচিত হন অস্ট্রিয়ার প্রধান মুফতি টার্কিশ কমিউনিটির মুস্তাফা মুল্লাওগ্লু এবং অস্ট্রিয়ার ৯টি রাজ্যের (ফেডারেল স্টেট) ইসলামিক রিলিজিয়াস কমিউনিটির (আই.আর. জি.) ৯ জন চেয়ারম্যান ও ৯ জন প্রধান ইমাম।
উল্লেখ্য, ইউরোপের মধ্যে অস্ট্রিয়া ব্যাতিক্রমধর্মী একটি দেশ। যেখানে ১৯১২ সাল থেকে ইসলাম অস্ট্রিয়ায় সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত একটি ধর্ম। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্য কর্তৃক ১৪৬৩ সাল থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত শাসিত এবং ১৯০৮ পর্যন্ত অটোমান অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে ১৯০৮ সালে অস্ট্রো–হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য (১৮৬৭ থেকে ১৯১৮) তাদের অধীনে সংযুক্ত করে।
অস্ট্রো–হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের এই অঞ্চলে ৬ লাখ মুসলমান বাস করত, যাদের ধর্মীয় অনুশীলনকে রক্ষা করা জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় বসনিয়ান মুসলমানরা সম্রাটের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করতেন, ইমামরা সামরিক চ্যাপ্লেন হিসেবে কাজ করতেন। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশীলন রক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগটি ১৮৭৪ সালে সম্পাদিত স্বীকৃতি আইন ১৮৭৪ (Anerkennungsgesetz 1874, RGBl. Nr. 68/1874) যা ধর্মীয় সমাজের আইনি স্বীকৃতি মোতাবেক ১৯১২ সালে অস্ট্রিয়ায় ইসলাম আইনি স্বীকৃতি পায়। (Art. 15 Staatsgrundgesetz, RGBl. Nr. 142/1867, Art. I Islamgesetz, RGBl. Nr. 154/1912 gesetzlich anerkannt.)
১৯৭১ সালে মুসলমানদের একটি সংস্থা ‘ইসলামী আইন ১৯১২’-এর ধারা মোতাবেক একটি ইসলামিক কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবেদন করলে ১৯৭৯ সালে ‘ইসলামিক রিলিজিয়াস অথরিটি ইন অস্ট্রিয়া’ পাবলিক আইনের অধীনে একটি কর্পোরেশন হিসেবে গঠিত হয়। অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী টার্কিশ, বসনিয়ান, অ্যারাবিয়ান, আলবেনিয়ান, আফ্রিকান ও এশিয়ানদের নেতৃত্বাধীন প্রায় চারশ মসজিদ ও ইসলামিক সংস্থার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্রধানত ১০টি বৃহৎ ইসলামিক কমিউনিটির (Kultusgemeinde) কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ইসলামিক রিলিজিয়াস অথরিটি ইন অস্ট্রিয়া’।
সংস্থাটি পাবলিক আইনের অধীনে একটি কর্পোরেশন হিসেবে অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী সমস্ত মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ের সরকারি প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করে। অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসনও উপভোগ করে। এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং অস্ট্রিয়ার নাগরিক প্রতিষ্ঠানের ইন্টারফেস। অস্ট্রিয়ান সকল স্কুলে সংস্থাটি কর্তৃক নিয়োগকৃত ও অস্ট্রিয়ান সরকারের বেতনভুক্ত ইসলামী ধর্মীয় শিক্ষকদের মাধ্যমে ইসলামী ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা, ইসলামী ধর্মীয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের চলমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করাসহ মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বহুবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ইসলামিক রিলিজিয়াস অথরিটি ইন অস্ট্রিয়ার সভাপতিগণ–
আহমদ আবেলরহিমসাই (১৯৭৯–১৯৯৯)
ডক্টর আনাস শাকফেহ (১৯৯৯–২০১১)
ডক্টর ফুয়াদ সনাক (২০১১–২০১৬)
ইব্রাহিম ওলগুন (২০১৬–২০১৮)
আইনস্বিদ অমিত ভুরাল (২০১৮ সাল থেকে-বর্তমান)।