নিজস্ব প্রতিবেদক: এ মাসেই অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের চার উপজেলার আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এরমধ্যে উজান এলাকার মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৫ মে ও হোসেনপুর উপজেলায় ২৬ মে। আর হাওরের ইটনা উপজেলায় ৩০ মে ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৩১ মে।
সম্মেলনকে ঘিরে দুই এলাকায় দুরকম পরিবেশ বিরাজ করছে। উজান এলাকায় নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অনেকের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ আর ক্ষোভ। এ নিয়ে চলছে বিক্ষোভ। আর হাওর এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। ১৯৯৭ সনের সম্মেলনে এডভোকেট আতাউর রহমানকে সভাপতি ও অধ্যক্ষ শরীফ সাদীকে
সাধারণ সম্পাদক করে সদর উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অধ্যক্ষ শরীফ সাদীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করে শরীফ সাদী বলেন, অভিযোগের কোন দালিলিক প্রমাণ কেউ দিতে পারবেননা। বরং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অনেক দালিলিক প্রমাণ তার রয়েছে। দলের প্রভাবশালী এক নেতাকে খুশি করতেই তাকে
অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, প্রভাবশালী এই নেতার অনুগত হওয়ায় বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকেও এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর করা হচ্ছে।
তৃণমূলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অন্যান্য উপজেলায় বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হলেও সদরের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সম্মেলনে কাদেরকে কাউন্সিলর করা হচ্ছে, সেটা বেশ কটি ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানেননা বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। সদর উপজেলার মারিয়া ও লতিবাবাদ ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মোস্তাফিজুর রহমান ও এস. এম তাজুল ইসলামের অভিযোগ, তাদের ইউনিয়নের কাউন্সিলরদের তালিকা জমা হয়ে গেছে। কিন্তু কাদেরকে কাউন্সিলর করা হলো, তারা কিছুই জানেননা। এদিকে গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান অভিযোগ করেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পর দলের হাই কমান্ডের শোকজের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ক্ষমা করে দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে গণ্য করার পরও তাকে কাউন্সিলর করা হয়নি। অথচ হোসেনপুরে বিজয়ী বিদ্রোহী চেয়ারম্যানকে কাউন্সিলর করা হয়েছে। দলে এমন দ্বিমুখী নীতি কার স্বার্থে, এ প্রশ্ন তার। দলের ত্যাগীদেরকে বঞ্চিত করা এবং অবৈধ পন্থায় কাউন্সিলর করার প্রতিবাদে তার নেতৃত্বে বিক্ষোভও হয়েছে।
এদিকে ১৮ বছর পর হোসেনপুরে সম্মেলন হতে যাচ্ছে। হোসেনপুরের গোবিন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন দুলাল অভিযোগ করেছেন, বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারীদেরকেও সম্মেলনে কাউন্সিলর করা হচ্ছে।
অথচ বৈধ অনেককে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম. এ আফজল বলেন, বিগত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের পক্ষে যারা কাজ করেছে
তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা কাউন্সিলর হতে পারবেনা। অনুপ্রবেশকারীদেরকে কাউন্সিলর করার বিষয়ে তিনি জানান, তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হাওর উপজেলা ইটনা ও অষ্টগ্রামে সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, হাওরে নেতাকর্মীদের মাঝে কোন বিভেদ এবং দলীয় কোন্দল নেই। সেখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে, কিন্তু দ্বন্দ্ব নেই। হাওরে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন করে নজির স্থাপন করবেন
বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৮ বছর পর ইটনা ও অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে।