সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন: বিএনপির দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেছেন, আমরা যে যা কিছু বলি, সরকার পতনের জন্য কোন আন্দোলন হতে পারেনা। এটা গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা হতে পারেনা। আজ আমি সরকার গঠন করতে পারলে আন্দোলন করে আগামীতে আমার সরকারের পতন ঘটাবে। অতীতে আমাদের সরকারের পতন করিয়েছে, এমন নজির রয়েছে। এতে আমাদের ব্যর্থতা ছিল, আমরা পারিনি। আমরা চাই একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ আসুক, সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশে যারাই নির্বাচিত হবে, তারাই ক্ষমতায় যাবে।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা কলেজ মাঠে ঈদ ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে আয়োজিত চারদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে রবিবার সন্ধ্যায় নিউজ একুশেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর আখতার বলেন, আন্দোলনের বিষয়ে আমরা যে বিষয়গুলোতে পরিচিত হয়ে যাচ্ছি, সেটা হলো একজন আন্দোলন করবে, আরেকজনকে বিতাড়ন করার জন্য। আমরা ইংরেজ খেদাও আন্দোলন করেছি, আমরা পাকিস্তান খেদাও আন্দোলন করেছি, আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। অর্থাৎ যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদেরকে হঠাতে হবে। এটা ছিল আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। কিন্তু আজ রাজনীতির অবস্থাটা, রাজনীতির সমস্যাটা চিন্তা করে দেখুন, এখানে প্রশ্ন হচ্ছে আমরা একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই। সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশে জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে, তারাই সরকার চালাবে। এখানে কাউকে বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখানে কাউকে বিতাড়িত করার কোন সযোগ নেই। এখানে ইংরেজ খেদাও কিংবা এরশাদের পতন বলে কোন সুযোগ নেই। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছে, তাদের মধ্যে একটা নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যারা জয়লাভ করবে তারাই ক্ষমতায় যাবে। সেখানে আওয়ামী লীগ গো ধরেছে, যে কোনভাবেই হোক তারা নির্বাচনটাকে তাদের মত করে করাবে। তাই তাদের প্রতি জনগণের আস্থা বিশ্বাস কমে গেছে। আওয়ামী লীগ যদি জনগণের মাঝে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিত, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হত, আমাদের কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে অধিকার জনগণের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে। এখানে আমরা আন্দোলন করতে পারি ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে আমি কখনোই একমত ছিলামনা, এখনো একমত নই। এতে দল যদি অসন্তুষ্ট হয় হোক।
আফ্রিকার দেশ সুদানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সুদানে কদিন আগে দুই দল একসঙ্গে হয়ে আগের সরকারকে হটিয়েছে। এখন নিজেরা ঐকমত্যে যেতে না পারায় গৃহযুদ্ধ বেধে গেছে এবং প্রতিদিন শত শত লোক মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে এরকম সুদান সৃষ্টি যদি কেউ করতে চায়, আমি তার সঙ্গে নেই। আমি অবশ্যই আন্দোলনের পক্ষে। তবে সে আন্দেলন হতে হবে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে, কাউকে উৎখাত করার জন্য নয়।
প্রবীণ এই নেতা বলেন, এই সরকারকে আমরা মেনে নিয়েছি গত চার বছর ধরে। এই সরকার চার বছর ক্ষমতায় ছিল, তাহলে আমি কেন সরকারকে বলবো পদত্যাগ করতে। আমার কী নৈতিক অধিকার আছে। চার বছর আমি এলাউ করলাম কেন এই সরকারকে টিকে থাকতে। কাজেই আমার কথা পরিস্কার, এই সরকার থাকুক। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ। সেটি যদি করতে না পারে সরকার, তাহলে সেজন্য এই সরকারকে এর মূল্য দিতে হবে। কাজেই আমি বিশ্বাস করি আমাদেরকে নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে হবে।
বর্তমান আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আমি মনে করি এখন আমার আন্দোলন করার কোন নৈতিক অধিকার নেই। কারণ এই সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে ডিক্লেয়ার করে চার বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে গেছে। তার মানে এ সরকার এখন বৈধ হয়ে গেছে। যে সরকারকে চার বছর আমি মেনে নিয়েছি, সেই সরকারকে এক বছর মেনে নেবোনা কেন। এই গণ্ডগোল, এই অসন্তোষ সৃষ্টি করার কোন অর্থ হয়না। তারচেয়ে উচিত হবে বিএনপিকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
দলে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে দলে নেওয়ার তো প্রশ্নই উঠেনা। এখন আর সময় কোথায়। নির্বাচনের আগে আমাকে বলবেন, আর গিয়ে মার খাবো, সেটা হবেনা। আমি আমার দলকে অনুরোধ করবো, সেরকম সুযোগ যেন আমাকে না দেওয়া হয়। আমাকে যেন সে হিসাবের মধ্যে রাখা না হয়। কারণ নির্বাচনের একমাস দুইমাস আগে নির্বাচনে গিয়ে আর মার খেতে চাইনা। আপনারা জানেন গতবার কি মার আমি খেয়েছি। আমার বহিষ্কার প্রত্যাহার হোক বা আমাকে দলে ফিরিয়ে নিক, তার জন্য আমি কোন চেষ্টা করবোনা, করতেও চাচ্ছিনা। আমি দুই দুইবার এমপি ছিলাম। আমার এমপি হওয়ার আর শখ নেই। আর ক্ষমতাহীন এমপি হওয়ার, দায়িত্বজ্ঞানহীন এমপি হওয়ার, ইয়েস স্যার এমপি হওয়ার কোন যুক্তি আমি দেখিনা আমার এই বৃদ্ধ বয়সে এসে। এখানে সংসদ সদস্যের অধিকার আমাদের নেই। সেখানে আর্টিক্যাল সেভেন্টি অধীনে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারিনা। সেখানে এমপি হওয়ার আমার ইচ্ছা আর নেই। তবে আমি বিএনপি করবো।
বিএনপির নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাতে আর মাত্র সাত আট মাস সময় আছে। এই সাত আট মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। এই এলাকা কটিয়াদী-পাকুন্দিয়াতে (কিশোরগঞ্জ-২) একজন ভালো প্রার্থী দেন, জনগণ যাকে পছন্দ করে এমন প্রার্থী দেন, তার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো। সর্বশক্তি দিয়ে আমি কাজ করবো।