ঢাকাশনিবার , ২০ নভেম্বর ২০২১
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘জননী সাহসিকা’ বেগম সুফিয়া কামাল

প্রতিবেদক
-
নভেম্বর ২০, ২০২১ ৩:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিংশ শতাব্দীর পশ্চাৎপদ রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের একজন মহিলা হয়েও সীমাবদ্ধতার গণ্ডি পেরিয়ে কবি, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী ও সচেতন নাগরিক হিসেবে যার ভূমিকা বিশেষভাবে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে তিনি হলেন আমাদের ‘জননী সাহসিকা’ বেগম সুফিয়া কামাল। 

১৯১১ সালের ২০ জুন (১০ আষাঢ়, ১৩২৮) বরিশালের শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে সুফিয়া কামালের জন্ম। নানির দেয়া ডাক নাম ছিল হাসনা বানু। তাঁর নানা ছিলেন একজন সাধক পুরুষ। নাতনির মুখে জন্মের সময় মধু দিয়ে নাম রেখেছিলেন সুফিয়া খাতুন। তাঁর পিতা সৈয়দ আব্দুল বারি পেশায় ছিলেন উকিল। সুফিয়া কামালের যখন সাত বছর বয়স তখন তাঁর পিতা গৃহত্যাগী হয়েছিলেন। নিরুদ্দেশ পিতার অনুপস্থিতিতে তিনি মা সৈয়দা সাবেরা খাতুনের পরিচর্যায় বড় হতে থাকেন। শায়েস্তাগঞ্জ নানার বাড়ির রক্ষণশীল অভিজাত পরিবেশে বড় হয়েও সুফিয়া কামালের মানসিকতা গঠনে দেশ, দেশের মানুষ, সমাজ এবং ভাষা ও সংস্কৃতি মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। 

সুফিয়া কামাল তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও নিজ চেষ্টায় সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত এবং সুশিক্ষিত। 

বাড়িতে উর্দুর রেওয়াজ থাকলেও স্বেচ্ছায় বাংলা ভাষা শিখে নিয়ে পর্দার অবগুণ্ঠন থেকে বেরিয়ে নিজেকে একজন আধুনিক প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯২৩ সালে মাত্র বারো বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। উদারমনা নেহাল হোসেন সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্য চর্চায় উৎসাহিত করে সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন।

এভাবেই তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আগ্রহ প্রকাশ করে ধীরে ধীরে সচেতন মনের অধিকারিণী হয়ে ওঠেন। 

পশ্চাৎপদ মহিলাদের জন্য তিনি সেবামূলক কাজে নিয়োজিত হন।

১৯২৩ সালে তাঁর প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৭ সালে তাঁর গল্প সংকলন ‘কেয়ার কাঁটা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’র মুখবন্ধ লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম। বইটি বিদগ্ধজনের প্রশংসা কুড়ায়। যাদের মাঝে রবি ঠাকুর ছিলেন অন্যতম। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়। ১৯২৫ সালে মহাত্মা গান্ধীর কাছে নিজ হাতে তুলে দেন চরকায় কাটা সুতো। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন প্রমুখের প্রভাব ও সহযোগিতায় তাঁর জীবন বিকশিত হয়েছে কৈশোর থেকে তারুণ্যে।

১৯৩২ সালে একুশ বছর বয়সে নেহাল হোসেনকে হারালেন। ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর কামালউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘ ৩৮ বছর তাঁর দাম্পত্য জীবনের সঙ্গী হয়ে ছিলেন। বেগম সুফিয়া কামাল কলকাতার কর্পোরেশন স্কুলেও চাকরি করেছেন।

তিনি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সমাজসেবা ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি আঠারো থেকে বিশ বছর বয়স পর্যন্ত বেগম রোকেয়ার ‘আঞ্জুমান খাওয়াতিনে’ কাজ করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ ‘(বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন এবং আজীবন তিনি এই সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

দেশ স্বাধীনের পরও তিনি অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি যেসব সংগঠনের প্রতিষ্ঠা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন সেগুলো হলো, বাংলাদেশ মহিলা পুনর্বাসন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন কমিটি এবং দুঃস্থ পুনর্বাসন সংস্থা। এ ছাড়াও তিনি ছায়ানট, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন এবং নারী কল্যাণ সংস্থার সভানেত্রী ছিলেন। 

‘কেয়ার কাঁটা’ সহ বেগম সুফিয়া কামালের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট চার। তিনি নারীবাদী হলেও নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি  ও মূল্যবোধকে বিবেচনায় রেখে নীতি-আদর্শ-ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন সর্বাগ্রে।

তার জীবনের ব্রত ছিল মানুষের কল্যাণ ও সত্যের সাধনা। অন্যায়ের সুস্পষ্ট প্রতিবাদ, দুঃশাসনের প্রতিরোধ সর্বোপরি নারীর অধিকার আদায়ে আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি বাংলার মুক্ত আকাশে ধ্রুব তারার মতো ভাস্বর হয়ে পথ দেখাবেন চিরদিন।

মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

সুফিয়া কামাল ৫০টির বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬১) (প্রত্যাখান করেন ১৯৬৯), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), সংগ্রামী নারী পুরস্কার, চেকোশ্লোভাকিয়া (১৯৮১), মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭)।

১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর এই যশস্বিনী নারী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন।

বাঙালি নারীর মন ও মননে গভীর শ্রদ্ধার সাথে অনন্তকাল ধরে তাঁর রেখে যাওয়া কর্ম পাথেয় হয়ে থাকবে।

লেখিকা: মাহফুজা আরা পলক

উপাধ্যক্ষ, কিশোরগঞ্জ মডেল কলেজ

ও সংগঠক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ,

কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা।

আপনার মন্তব্য করুন