নিজস্ব প্রতিবেদক: তোমাদেরকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ, বঞ্চনা আর আত্মদানের করুণ ইতিহাস। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, তাদেরকে যথাযথ সম্মান জানাতে শিখতে হবে। বাংলাদেশের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সেসব সম্পর্কেও তোমাদের জানতে হবে।
আজ রবিবার বিকালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বাংলাদেশ স্কাউটস আয়োজিত তৃতীয় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্কাউট ক্যাম্প এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ কথাগুলো বলেন।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, স্কাউট আন্দোলন শিশু–কিশোরদের চারিত্রিক গুণাবলি বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করার মানসিকতা তৈরিতে স্কাউটিং এর ভূমিকা অনন্য। আমাদের স্কাউটরা নিয়মিত সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও আর্তমানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
তিনি বলেন, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে স্কাউটরা রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা। বিশেষ করে শিশু–কিশোর ও যুবদের মাদক, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প থেকে নিরাপদ এবং দূরে রাখতে স্কাউটিং ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। স্কাউটিংই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, প্রগতিশীল ও সৃজনশীল করে গড়ে তুলতে।
সরকার বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নতুন প্রজন্মকে দক্ষ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রায় নেতৃত্বদানের জন্য আগামী প্রজন্মকে স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে স্কাউট নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান তিনি ।
তৃতীয় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্কাউট ক্যাম্পের জন্য হাওর এলাকা মিঠামইনকে নির্বাচিত করায় রাষ্ট্রপতি স্কাউট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্কাউটদের জন্য এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। এখানে শহরের চাকচিক্য না থাকলেও হাওরের উত্তাল বাতাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার মহিমা তোমাদের মন ভরে দিতে কোনো কার্পণ্য করবে না।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্কাউট সদস্যদের ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তোমাদের কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একজন স্কাউট লেখাপড়ায় যেমন ভলো, তেমনি সমাজে পরোপকারী ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সকলের স্নেহ ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকারী। তোমরা কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে স্কাউট আদর্শের প্রতিফলন ঘটাবে এবং দেশের যে কোনো প্রয়োজনে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আত্মনিয়োগ করবে। নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে স্কাউটদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের সকল উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউট এর সদস্যরা স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে অংশ নিয়ে দেশকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (অনুসন্ধান) বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার ও ক্যাম্প চীফ ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও তৃতীয় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্কাউট ক্যাম্প সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি এম এম ফজলুল হক আরিফ।
অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি এ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ক্যাম্প উদ্বোধন করেন।
স্কাউট ক্যাম্পের সঙ্গে যুগপৎভাবে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, ইটনা ও অষ্টগ্রাম উপজেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণকারীরা সাইক্লোন, হাওরের প্লাবন, অগ্নি নির্বাপন, ভূমিকম্প এবং বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলার কৌশল হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। এছাড়ও বৃক্ষরোপন, মাস্ক বিতরণ, প্রদর্শনী পল্লী পরিদর্শন এবং হাওরের জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করে দুর্যোগ রেসপন্স টিমের সদস্য হয়ে কাজ করার মত দক্ষ হয়ে উঠবে। ক্যাম্প চলাকালে রোভার স্কাউট, স্কাউটার ও স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁবুতে অবস্থান করে তাদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করবে।
উল্লেখ্য, মিঠামইনের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ মাঠে তৃতীয় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্কাউট ক্যাম্পে রোভার স্কাউট, স্কাউটার ও স্বেচ্ছাসেবকসহ দেড় হাজার সদস্য অংশ নিচ্ছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভারত ও নেপালের ২৭ জন স্কাউট ও স্কাউটার রয়েছেন।
স্কাউট ক্যাম্পটি ৩০ মার্চ শেষ হবে।