নিজস্ব প্রতিবেদক: সুবিধাভোগীদের দেওয়া কার্ড জমা নিয়ে টোকেনের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। টোকেনগুলো নীলগঞ্জ পুরাতন বাজার জামে মসজিদের নামের সীলযুক্ত এবং এতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর রয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদে এই টোকেনের মাধ্যমেই বিতরণ করা হয় টিসিবির পণ্য।
স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, চেয়ারম্যান আগেই কৌশলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কার্ড জমা নিয়ে নেন। পরে টোকেনের মাধ্যমে নিজের আত্মীয়–স্বজন আর সমর্থকদের মধ্যে এ পণ্য বিক্রি করেন তিনি। বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেম্বাররাও জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান তার নিজের সমর্থকদের মন রাখতেই ব্যস্ত। তার এমন সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আমাদের ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীদের কাছে ছোট হচ্ছি। সঠিকভাবে পণ্য বিতরণ করতে না পারায় তারাও আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভোগী জানান, গত ঈদুল ফিতরের আগে চাল, ডাল, আর চিনি দেওয়ার সময় চেয়ারম্যান তাদের কাছ থেকে কার্ডগুলো জমা নিয়েছিলেন। আজ সকালে গিয়ে তারা দেখতে পান, যাদের হাতে টোকেন আছে তারাই মাল পাচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে গিয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, তোমাদের মাল আসেনি। আসলে পাবে। তারা আগে এসে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পাননি বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাধারণ ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য জানান, ২৭ তারিখে চেয়ারম্যান সাহেব তাদেরকে নিয়ে মিটিং করেছেন। তখন তিনি বলেছেন, গতবারের তুলনায় এবার মাল কম এসেছে। এগুলো কিভাবে বন্টন করা যায় সে বিষয়ে আমাদের মতামত নিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু বিতরণের সময় তিনি তার ইচ্ছেমত বিতরণ করেছেন। তারা আরও বলেন, মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতি ওয়ার্ডে ৬৫ টি করে টোকেন দিবেন। আমরাও রাজি হয়েছি। কিন্তু আজ সকালে আসার পর মাত্র ৯ টি টোকেন হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এগুলো থেকে আমরা কাকে রেখে কাকে দেবো? আমাদের ওয়ার্ডের অনেকেই এসে মাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন। তারা অনেকেই আমাদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তাদেরকে কিছু দিতে পারিনি বলেও আমরাও লজ্জিত হয়েছি।
সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে আগেই ডিলার কার্ড নিয়ে গেছেন এবং পরিমাণের তুলনায় পণ্য কম আসায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে টোকেনে মাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তারু। তিনি এ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তিনি জানান, আমার ইউনিয়নে ২ হাজার ৬৮৪ জন টিসিবি কার্ডধারী সুবিধাভোগী রয়েছেন। কিন্তু আমি মাল পেয়েছি ১ হাজার। এখন কী করবো? এই বিষয়ে আমার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে ইউএনও সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেই এভাবে পণ্য বিতরণ করেছি।
তবে মেসার্স আবদুস সালাম ট্রেডার্সের স্বাধিকারী ডিলার মো. আবদুস সালাম জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, সুবিধাভোগীদের কার্ডগুলো আমার কাছে ছিল ঠিকই, কিন্তু আজ থেকে আরও ২০ দিন পূর্বেই চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখনও তার কাছেই আছে। তিনি বলেন, গোডাউনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য না থাকায় এক সাথে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। আজ আমরা যে পরিমাণ পণ্য পেয়েছি তাতে ১ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা যাবে। বাকিটুকুও দু এক দিনের মধ্যেই দিয়ে দেবো।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী জানান, টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিতরণের বিষয়টি জেনে চেয়ারম্যানকে ফোন করে বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, তালিকার বাইরে টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিতরণের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।