নিউজ একুশে ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম দাখিল করেন।
এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন। ’
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।
আজ বেলা ১০টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের সামনে এসে ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ফারুক খান, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ প্রমুখ অপেক্ষা করতে থাকেন। এর ১০ মিনিট পর মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশনে এলে তাকেসহ প্রতিনিধিদল ভেতরে ঢোকে।
এদিকে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নয়, সবকিছু সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছায়।
তফসিল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রত্যাহার ১৪ ফেব্রুয়ারি। সংসদ ভবনে ভোট গ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে ভোটের প্রয়োজন হবে না।
সে ক্ষেত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনেই একক প্রার্থীকে দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
সংবিধান অনুয়াযী, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে।
পাবনার সন্তান মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর জন্ম ১৯৪৯ সালে। ছাত্রজীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কারাবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র সন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পেশায় সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক। তিনি ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের নেতা কর্মীর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।