ঢাকাFriday , 20 January 2023
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

একুশ বছর পর খাদিজা ফিরে পেল ঠিকানা

প্রতিবেদক
-
January 20, 2023 7:17 pm
Link Copied!

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন: খাদিজার যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন মা মারা যায়। এক ভাই আর দুই বোনের মধ্যে খাদিজা মেঝো। বড় বোন খুদেজা বোবা। টানাপোড়েনের সংসারে একমাত্র ছোট ভাই মাইদুলকে দেওয়া হয় দত্তক। খাদিজাকে ঢাকায় নিয়ে যান তার চাচা। ঢাকায় যাবার পর মারা যান তার বাবা মারফত। সে খবর পায়নি খাদিজা। শেষবারের মতো পিতার মুখও দেখা হয়নি। বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া খাদিজার গল্প সেই থেকে শুরু। তবে খাদিজার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা যেন গল্পকেও হার মানায়।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ভাগ গ্রামে খাদিজার বাড়ি। মায়ের মৃত্যুর পরের বছর ২০০১ সনের কোনো একদিন চাচা মঞ্জিল মিয়া খাদিজাকে নিয়ে যান ঢাকায়। মোহাম্মদপুর বস্তিতে গিয়ে উঠেন। তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। বস্তিতে কয়েকদিন থাকার পর মোহাম্মদপুরে এক সাংবাদিকের বাসায় খাদিজাকে কাজের জন্য নিয়ে যান চাচা মঞ্জিল। ২০১৩ সনে বাসা বদল করে সাংবাদিক চলে যান আদাবর এলাকায়। সেখানে একটি বিল্ডিংয়ের পাঁচতলায় গিয়ে উঠেন। তাদের সঙ্গে ভালোই দিন
কাটছিল খাদিজার। তবে বাড়ির সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তার।

একদিন গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে খাদিজা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বাসার নিচের গ্যারেজে সারাদিন থাকলেও সাংবাদিক বা গৃহকর্ত্রী কেউ তার খোঁজ নেয়নি। সন্ধ্যার পর আমিন নামে ছয়তলার এক বাসিন্দা আশ্রয় দেন খাদিজাকে।

সাংবাদিকের বাসা থেকে বের হওয়ার সঠিক দিন তারিখ মনে না থাকলেও খাদিজা জানায়, সেটি ২০২১ সালে করোনার পর। আশ্রয়দাতা ব্যক্তিটি খাদিজাকে নিয়ে যান তার লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর আবারও ফিরে আসেন আদাবরে। ফিরে এসে সাংবাদিকের বাসায় যেতে চাইলেও তারা তাকে গ্রহণ করেননি।

নিজের বাড়ির ঠিকানাও তার মনে নেই। এক পর্যায়ে মোহাম্মদপুরের এক মাদ্রাসায় খাদিজাকে ভর্তি করে দেন আশ্রয়দাতা আমিন। একদিন মাদ্রাসার হুজুর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান তার মুরিদ আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেন খাদিজাকে। খাদিজা দেখতে সুন্দর হলেও ঐ মুরিদ একটি দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। নানা দিক চিন্তা করে অন্ধ আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়েতে রাজি হয় খাদিজা। ২০২১ সনের ৩০ জুন আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় খাদিজার। বিয়ের পর স্বামী আলাউদ্দিনকে নিয়ে মোহাম্মদপুর ওয়ারলেস গেট এলাকায় নতুন করে জীবন শুরু করেন খাদিজা। বর্তমানে জান্নাতুল ফেরদৌসী নাজ নামে সাত মাস বয়সী তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

সাংবাদিকের বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই মূলত নিজের বাড়ি ও স্বজনদের কথা বিশেষ করে বোবা বড় বোনটির কথা বেশি মনে হতে থাকে তার। কিন্তু ঠিকানা জানা নেই। এক পর্যায়ে ঢাকায় আরজে কিবরিয়ার “আপন ঠিকানায়” যোগাযোগ করে খাদিজা তার অতীত জীবনের ঘটনা খুলে বলে। এটি ইউটিউব ও ফেসবুকে ভাইরাল হলে খাদিজার বাড়ির লোকজনের নজরে পড়ে। চ্যানেলে খাদিজাকে দেখে তারা চিনতে পারে। গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বাড়ির লোকজন ঢাকায় গিয়ে নিয়ে আসেন খাদিজাকে। বাড়ি ছাড়ার সময় পিতা মারফত আলী জীবিত থাকলেও ফিরে এসে বাবাকে পাননি খাদিজা। ঢাকা থেকে ফিরে এসে উঠেন নানার বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরের কাটাবাড়িয়া গ্রামে। তার কথা শুনে অনেকেই ভিড় করেন বাড়িটিতে। বাবা মায়ের কথা মনে করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন খাদিজা। আজ শুক্রবার বড়ভাগ গ্রামে গিয়ে খাদিজা তার মা বাবার কবর জিয়ারত করেন।

খাদিজা জানান, বাড়িতে ফিরতে পেরেছি, বাড়ির লোকজনকে পেয়েছি, এখন আর কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তবে পিতাকে শেষবারের মতো না দেখার বেদনা রয়েই যাবে। খাদিজা আরও জানান, ঢাকায় ফিরে গেলেও বাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। স্বামীকে নিয়েও মাঝে মাঝে আসবেন এ বাড়িতে।

খাদিজার মামাতো ভাই মতিউর রহমান জানান, আমার ফুফাতো বোন খাদিজাকে ৬ বছর বয়সে তার চাচা ঢাকায় নিয়ে গেছিলো। কয়েক মাস তার সাথে যোগাযোগ থাকলেও পরে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পরে মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখে তাকে আমরা চিনতে পারি। পরে ঢাকায় গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। খাদিজাকে ফিরে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। তবে ফুফা ও ফুফু বেঁচে থাকলে আরও ভালো লাগতো।

খাদিজার মামী লুৎফা বলেন, ২১ বছর আগে খাদিজা ঢাকায় গেলে তার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। পরে অনেক খোঁজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এখন পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।

আপনার মন্তব্য করুন