ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মা-ছেলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন ইতালী প্রবাসী মো. ফরহাদ মিয়ার স্ত্রী জোনাকী বেগম (২৫) ও তার তিন বছর বয়সী ছেলে আলিফ।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার সম্ভুপুর এলাকায়। নিহতের স্বজনদের দাবি শাশুড়ির মানসিক নির্যাতনে জোনাকী বেগম সন্তানসহ আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভৈরবের সম্ভুপুর এলাকার ফরহাদ মিয়া, তার পিতা ও ভাইসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য দীর্ঘদিন ধরে ইতালীতে থাকেন। ছয় বছর আগে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার জোনাকী বেগমকে বিয়ে করেন ফরহাদ। বর্তমানে তাদের সংসারে তিন বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রযেছে। স্বামী ফরহাদ ইতালীতে থাকলেও তার স্ত্রী ভৈরবের বাড়িতে শাশুড়ির সঙ্গে বসবাস করতেন। আগামি কোরবাণীর ঈদের পর মা বেবী বেগম, স্ত্রী জোনাকী ও ছেলে আলিফকে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। স্বামীর পাঠানো টাকা পয়সা, গহনা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রায়দিনই শাশুড়ি বেবী বেগমের সঙ্গে ঝগড়া হত বলে জোনাকীর মায়ের দাবি। এছাড়া ইতালি যাওয়া নিয়েও কয়েকদিন আগে ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে।
প্রতিবেশিরা আরও জানায়, ফরহাদ মিয়া এর আগেও একটি বিয়ে করেছিল। শাশুড়ির নির্যাতনে বিয়ের কিছুদিন পরই সে স্ত্রী চলে যায়। পরে পারিবারিকভাবে জোনাকীকে বিয়ে করেন ফরহাদ।
পারিবারিক কলহের কারণে জোনাকী বেগম তার শিশুসন্তানসহ বসতঘরের ধরনায় গলায় রশি পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। প্রতিবেশী ও স্বজনদের ধারণা জোনাকী প্রথমে তার সন্তানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পরে তিনি নিজেও ফাঁসিতে ঝুলেন। শাশুড়ি ঘটনা দেখে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দুজনকে রশি থেকে নামিয়ে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে জোনাকীর বাবার বাড়ির লোকজন হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় শাশুড়ি বেবী বেগম ও তার লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
নিহত জোনাকী বেগমের মা ছালেহা বেগম অভিযোগ করেন, শাশুড়ি বেবী বেগমের মানসিক নির্যাতনে আমার মেয়ে তার সন্তানসহ এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন। নিহতের বড় বোন ঝর্ণা বেগমের দাবি, ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক নওরীণ সুরভী জানান, হাসপাতালে আনার পর আমরা দুজনকেই মৃত পেয়েছি। দুজনের গলায় বড় ধরণের দাগ রয়েছে । ময়না তদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. আল আমিন হোসাইন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। পারিবারিক কলহের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলেও ধারণা পুলিশের। দুজনের মরদেহের সুরতহাল তৈরি করা হয়েছে। দুজনেরই গলায় দাগ রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।