নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরা এই সংসদ বাতিল চাই। কারণ এই সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত না। আমরা এমন সংসদ চাই, যে সংসদ জনগণ নির্বাচিত করবে। সেজন্য আমরা নতুন নির্বাচন চাই। নতুন নির্বাচন যদি সুষ্ঠু করতে হয়, তাহলে এই সরকারের অধীনে হবেনা। এই সরকারের অধীনে সংসদ তো দূরের কথা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়না।
আজ শনিবার বিকালে কিশোরগঞ্জ শহরের রথখলা ময়দানে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারা তো আমাদেরকে মিটিংই করতে দিতে চায়না, মিছিল করতে দিতে চায়না। নির্বাচন সুষ্ঠু করবে কেমনে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবির মধ্যে কোন অস্পষ্টতা নেই। আমাদের পরিষ্কার দাবি।এই সরকারের পদত্যাগ চাই। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় সরকার চাই। তিনি প্রশ্ন রাখেন এই দাবি কি অন্যায়, নাকি অবাস্তব, নাকি অপ্রয়োজনীয়? অন্তর্বর্তীকালীন নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে আইন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দাবি মানতে হবে।
এই সরকারের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই সুষ্ঠু হয় না আবার সংসদ নির্বাচন। আমাদের দাবি একটাই সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে আজ পর্যন্ত কোনো স্বৈরাচার আগেও টিকে নাই, আগামীদিনেও টিকবে না। আমাদেরকে এমন শক্তি সঞ্চয় করে ঐ শক্তি দিয়ে লড়াই করতে হবে এবং বিজয়ী হতে হবে। জনতার শক্তির বলেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব এবং আমাদের ভাই তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে পারব। জনগণের সম্মিলিত শক্তির মুখে এই সরকারকে পরাজিত হতে বাধ্য করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আজকে বাংলাদেশের জন্য ভিসা রেস্ট্রিকশনের আইন হয়ে গেল। বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে অসম্মান আর হতে পারে না। নাইজেরিয়ায় এটা হয়েছে, বাংলাদেশেও হয়েছে। আমরা কি দুর্নীতি, অনাচারগ্রস্থ নাইজেরিয়ার সমান? মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন দেশ। আগে কত সরকার গেছে, কখনোই তো এই আইন আসে নাই। কেন এই আইন আসছে। রাষ্ট্রদূতদের ফ্ল্যাগ নামিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আমিওতো রাষ্ট্রদূত ছিলাম। আমিও তো আইন জানি।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বাপের জন্মে কোনদিন শুনিনি সেকেন্ড হোম বলে কোন কথা। লক্ষ কোটি মানুষ আছে যাদের বাড়িঘর নেই। গৃহহীন মানুষ ফুটপাতে ঘুমায়। আর সেই দেশের কিছু মানুষ বিদেশে সেকেন্ড হোম বানায়। যারা সেকেন্ড হোম বানিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করে বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, বিএনপির কেউ থাকলে তারও বিচার করেন। কিন্তু তারা করবেনা। সেটা করলে তারা ধরা খেয়ে যাবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি লায়লা বেগম, কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, এডভোকেট জালাল উদ্দীন, এডভোকেট রেজাউল করিম খান চুন্নু, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, রুহুল হুসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, আমিনুল ইসলাম আশফাক, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ নেভীন।
দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, দুর্নীতি, মিথ্যা ও গায়েবী মামলা, গ্রেফতার, জামিন বাতিল, দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ জন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।