আদালত প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার দায়ে কারারক্ষী স্বামীকে ফাঁসি ও একইসঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ আসামির উপিস্থিতিতে এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের কারারক্ষী খাইরুল ইসলাম (২৫) টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার বাইচাইল গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৮ সালে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী গ্রামের দুবাই প্রবাসী আব্দুল মান্নানের ছোট মেয়ে রুমা আক্তারের (২২) বিয়ে হয় কারারক্ষী খাইরুলের সঙ্গে। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ কারাগারের সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করতে থাকেন খাইরুল। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিলেন স্বামী খাইরুল। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়ের ছয় মাস পর বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না হয়ে খাইরুল মোটরসাইকেল কেনার জন্য আবারও ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু স্ত্রী রুমা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে তার ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় ২০২০ সনের ২২ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে যৌতুকের জন্য রুমাকে মারপিট করেন স্বামী খাইরুল। একপর্যায়ে বিষ জাতীয় কিছু খাওয়ালে রুমা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে রুমা অসুস্থ হয়ে পড়েছে মর্মে তার মাকে খবর পাঠান খাইরুল। খবর পেয়ে মা ছিনু বেগম পরদিন ভোরে তার বড় মেয়ে সোমা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে কারাগারের সরকারি কোয়ার্টারে গিয়ে ছোট মেয়ে রুমাকে গুরুতর অসুস্থ দেখতে পান। পরে কোয়ার্টারে বসবাসরত অন্যদের জিজ্ঞাসা করে মেয়েকে মারপিট করার বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। এমতাবস্থায় মেয়েকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। কিন্তু স্বামী খাইরুল হাসপতালে গিয়ে চিকিৎসাকাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন। নিরুপায় হয়ে স্বজনদের সহায়তায় ঐদিন রাত ১০টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় মেয়ে রুমাকে নিয়ে বাজিতপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে ২৬ ডিসেম্বর মেয়েকে হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান মা। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে রুমার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ঐদিনই এম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে রাত দেড়টার দিকে লাশ নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় যান স্বজনরা।
এ ব্যাপারে রুমার মা ছিনু বেগম বাদী হয়ে ৩১ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় খাইরুলকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।