নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে রাতুল (২৪) হত্যা মামলার ছয় আসামিকে টাকার বিনিময়ে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়েছে পুলিশ। এ সুযোগে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে এসে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
রবিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে কিশোরগঞ্জের একটি অনলাইন পোর্টাল কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
মামলার বাদী নিহত রাতুলের চাচা শফিকুল ইসলাম জানান, রাতুল হত্যার ঘটনায় চিহ্নিত ১০ জনের নামে হোসেনপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকা স্বত্বেও পুলিশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মূল অভিযুক্তসহ ছয় আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
আসামিদের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে, এমন পাঁচজনকে এক আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে নতুন করে মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বাদীপক্ষের লোকজন। তারা আরও জানান, আসামিদের বেশিরভাগই ঘটনার পর বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত রাতুলের মা বিলকিছ ব্যানারে রাতুলের ছবি জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি জানান, রাতুল ছিল তার একমাত্র ছেলে সন্তান। রাতুলের বাবা সাত বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই থেকে সেলাইয়ের কাজ করে এবং আত্মীয় স্বজনের সহায়তায় ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে এইচএসসি পাশ করিয়েছেন। অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য রাতুল ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি নেয়। এক পর্যায়ে বিদেশে যাবার সব আয়োজনও সম্পন্ন করে। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল রাতুলের। সৌদি যাওয়ার আগে কয়েকটা দিন মায়ের সঙ্গে কাটাবার জন্য ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন মা। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। ঘাতকরা পরিকল্পিতভাবে রাতুলকে হত্যা করেছে। এসব কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রাতুলের মা বিলকিছ।
উল্লেখ্য, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হোসেনপুর উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রাতুল প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাহেবেরচর মধ্যপাড়া এলাকায় একটি মাজারের ওরশে যচ্ছিলেন রাতুল ও তার চাচা রিফাত মিয়া। আগে থেকে রাস্তায় ওৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। আশংকাজনক অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড় ১১টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে রাতুলের মৃত্যু হয়।
রাতুলের চাচা শফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় পুলিশ ছয়জনকে অব্যাহতি দিয়ে গত ২৭ জুন অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া ছয় আসামি হলেন বকুল মিয়া, কফিল মিয়া, লিটন মিয়া, মাসুদ মিয়া, শিপন মিয়া ও আব্দুল জলিল।
হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু টাকার বিনিময়ে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার তদন্ত এবং প্রকৃত আসামির জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে, তাদের নামেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী ও নিহত রাতুলের মা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাতুলের বোন বিথী আক্তার, চাচি মমতাজ বেগম, রাতুলের আত্মীয় নজরুল ইসলাম, মো. শাহিদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ।