সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন: জাতীয় পার্টির মহাসচিব কিশোরগঞ্জ–৩ (করিমগঞ্জ–তাড়াইল) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু করার, সেটা কেয়ারটেকারে হোক বা যে সরকারেই হোক, বর্তমান পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বিকল্প প্রস্তাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়ায় একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিকল্প প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি জানান, ইউরোপসহ শ্রীলংকা ও নেপালে যেটা আছে, সেটা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ যে নির্বাচনে প্রার্থী থাকবেনা। শুধুমাত্র প্রতীকে ভোট হবে। যে দল যত পার্সেন্ট ভোট পাবে, তত পার্সেন্ট এমপি তারা দিবে। তাদের নির্ধারিত প্রার্থীদের নাম আগেই নির্বাচন কমিশনে জমা দিবে। সেই সিস্টেম হলে অনাচার, ভোটডাকাতি এগুলোর কোনো প্রয়োজন থাকবেনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার নেতা এরশাদ সাহেব ২০ বছর আগে এই প্রস্তাব দিয়ে গেছেন। আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপি তাদের দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে বর্তমান সিস্টেমটা চেঞ্জ করার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। ঐ সিস্টেমটাই চেঞ্জ করতে হবে। আসলে গোড়ায় গলদ। আমাদের সিস্টেমটাই নির্বাচন শতভাগ ফেয়ার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে কারণেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
কেয়ারটেকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেয়ারটেকারের অধীনে আগেও কয়েকবার নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই কেয়ারটেকার সরকারকে বিতর্কিত করেছে।
১৯৯৬ সনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায়, তখন বিএনপি বলেছিল, কেয়ারটেকার আওয়ামী লীগকে ফেভার করে ক্ষমতায় আসার ব্যবস্থা করেছে। ২০০১ সালে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যায়। তখন আওয়ামী লীগ একই কথা বললো যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য লতিফুর রহমান যা যা করার সবই করেছে। আবার যখন ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে, তখন বিএনপি বলেছিল ওয়ান ইলেভেন সরকার ইনটেনশনালি কারসাজি করে মহাজোটকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য যা যা করার তাই করেছে। তার মানে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়না, সেটা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুটি দলের বক্তব্যেই এসেছে।
তিনি বলেন, কেয়ারটেকার আসলে কোনো প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হলো আন্তরিকতার। বিএনপি বলেন আর আওয়ামী লীগ বলেন, সবার যদি আন্তরিকতা থাকে তাহলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এবং সেটা এক টেবিলে বসে সেই পরিবেশ করা সম্ভব। সরকার সহযোগিতা করলে সংবিধানের মধ্য থেকেও সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন সম্ভব। সরকার যেহেতু চালকের ভূমিকায় আছে, তাই নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় সব দলকে এক টেবিলে আহ্বান করা সরকারেরই উচিত এবং সরকারকেই সে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সংবিধান মতে একটা ফেয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান একটা ফর্মুলা দিতে পারবেন এবং সরকারের আন্তরিকতা থাকলে সংবিধানের অধীনে একটা ফেয়ার নির্বাচন করা যাবে বলে আশা করছেন বর্ষিয়ান এই পার্লামেন্টারিয়ান।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ চাচ্ছে ফেয়ার নির্বাচন। বর্তমান সরকার বলছে তারা নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে, যাতে ফেয়ার নির্বাচন হয়। আবার বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা নেই বিএনপির। তাই তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেনা। আবার আওয়ামী লীগ বলছে তারা সংবিধানের বাইরে যাবেনা। এখন দুই দল নো রিটার্ন পজিশনে চলে গেছে। দুই দলেরই এক দফা। তারা এমন একটা পয়েন্টে চলে গেছে, যেখান থেকে ব্যাক করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক বিষয়গুলি যদি এক দফায় চলে যায়, নো রিটার্ন পজিশনে চলে যায়, সেটা দুঃখজনক। রাজনৈতিক বিষয়গুলি আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে হলো আলোচনা। গণতান্ত্রিক পরিবেশে আলোচনা ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হবেনা। আলোচনাটা হলো গণতন্ত্রের একটা সুন্দর পদক্ষেপ এবং এটা একটা অলংকার।
আগামী নির্বাচন যদি বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী হয়, আর যদি সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়, তাহলে আপনাদের ভূমিকা কী হবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ৯১ এর পর থেকে সব নির্বাচনেই আমরা গিয়েছি। এই সরকারের অধীনে অনেকগুলো উপনির্বাচনেও আমরা গিয়েছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও গিয়েছি। যদিও আমাদের অভিজ্ঞতা ভালোনা। কারণ এই সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে এমনকি মেম্বার–চেয়ারম্যান নির্বাচনগুলোতেও জোড়াজুড়ি করে আমাদের প্রার্থীদেরকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে, কোথাও এরেস্ট করেছে, কোথাও মেরেছে। পাবনার শাহজাদপুরে এমপির উপ নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীকে কাপড় পর্যন্ত ছিড়ে ফেলেছে তারা। অনেক অত্যাচার করেছে। তারপরও আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। কারণ নির্বাচন ছাড়া কোন পথ নেই। আমরা নির্বাচনে যাই, নির্বাচনে যাওয়ার মত দল। কিন্তু আমরা চাই যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে এনসিওর করতে হবে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নিরপেক্ষ হবে। এটা এনসিওর করলেই আমরা নির্বাচনে যাব।
এর আগে নিজ নির্বাচনী এলাকায় একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এমপি চুন্নু।