ঢাকাWednesday , 17 July 2024
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অষ্টগ্রামে শেষ হলো মহরমের শোকানুষ্ঠান

প্রতিবেদক
-
July 17, 2024 6:16 pm
Link Copied!

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: কারবালার শোকাবহ ঘটনার আবহে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ১৬২ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে পবিত্র আশুরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও নানা আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ ছিল অষ্টগ্রামের “কারবালা” ময়দান। ১ মহরম নিশান উত্তোলন করে শুরু হয় অনুষ্ঠান এবং বুধবার ১০ মহরম তাজিয়া মিছিলের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মহরমের চাঁদ দেখার পর অর্থাৎ ১ মহরম থেকে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হাবেলিবাড়ির ইমামবাড়ায় লাল ও কালো নিশান উত্তোলন, ফজর নামাজের পর জারি, মাতম মার্সিয়া, রোজা রাখা, নিরামিষ জাতীয় সাধারণ মানের খাবার গ্রহণ, খালি পায়ে থাকা মাটিতে শয়ন, তবারক বিতরণসহ নানা রকম শোকানুষ্ঠান চলে। মূল অনুষ্ঠান হয় ৯ ও ১০ মহরম। ৯ মহরম দুপুর ১২ টা ১ মিনিটে এবং রাতেও ১২ টা ১ মিনিটে  ইমাম হোসাইনের রোহানী ফয়েজ হাসিলের উদ্দেশ্যে হাজারো ভক্ত, মুরিদ হাবেলিবাড়ির ইমামবাড়ায় গাস্ত (প্রদক্ষিণ) দিয়ে থাকে। এই শোকানুষ্ঠানে অষ্টগ্রামের হাজারো সুন্নী মুসলমান হোসাইন প্রেমিকগণ ঐতিহাসিক হাবেলিবাড়ির হোসাইনী মোকামে জমায়েত হয়েহায় হোসাইন, হায় হাসান” ধ্বনিতে অশ্রুবিসর্জন করে থাকেন। ১০ মহরম তাজিয়া মিছিলের মধ্য দিয়ে স্থানীয়  “কারবালায়” গিয়ে সমাপ্তি হয় অষ্টগ্রামের আশুরা অনুষ্ঠান।

একই অবস্থা চলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অর্ধশত ইমামবাড়ায়। শুধু তাই নয়, একই নিয়মে মহরম পালিত হয় কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হোসেনপুর, ভাগলপুর বৌলাই এলাকায়, নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি মদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল নাসিরনগর, হবিগঞ্জের সুলতানশী হাবেলিসহ প্রায় ১০১ গ্রামে। এছাড়া সিলেট সুনামগঞ্জসহ আরো অনেক এলাকাতে একই নিয়মে মহরম পালিত হয়।

জানা গেছে, অষ্টগ্রামে সুন্নীদের মধ্যে মহরম অনুষ্ঠানের প্রধান প্রবক্তা হলেন হযরত শাহজালাল (রহ.) এর সহচর সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ.) এর ১৩ তম বংশধর জোয়ানশাহী পরগণার নয়কোষা জমিদারী ত্যাগী ভাটির অলী হিসেবে খ্যাত হযরত সৈয়দ আব্দুল করিম আলহোসাইনী (রহ.), যিনিসৈয়দ আলাই মিয়া সাহেব’ নামে বেশী পরিচিত। তার প্রধান বাক্য উক্তি ছিলগুরু শিস্য লোভী কামী, উভয় নরকগামীএবংভোগে নয় ত্যাগেই খোদা প্রাপ্তি হয় তিনি জমিদারি ত্যাগ করে একটি জীর্ণ কুটিরে অবস্থান করে স্রষ্টার ধ্যান সাধনায় মগ্ন থাকতেন। তিনি হোসাইন প্রেমে সর্বদা মুহ্যমান হয়ে ভক্তদের হোসাইন প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। যে স্থানটি স্থানীয় কারবালার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এর ৯৬ শতক জায়গা সৈয়দ আব্দুল করিম আলহোসাইনী চিশতি (রহ.) ওরফে সৈয়দ আলাই মিয়া কর্তৃক দানকৃতএখানকার ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আব্দুল করিম আলহোসাইনী চিশতি (রহ.) আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হওয়ায় আনাদায়ী খাজনার দায়ে ১৮৩৬ সালে কোষা জমিদারিবিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়কালক্রমে অষ্টগ্রামেরদেওয়ান বাড়িরনাম পরিবর্তন হয়ে হাবেলিবাড়ি বা হাওলিবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।  হাবেলিবাড়িকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৬১ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে শোকাবহ আশুরা অনুষ্ঠান। 

বিষয়ে হাবেলিবাড়ির সন্তান অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, ৬১ হিজরিতে কারবালার উত্তপ্ত মরু প্রান্তরে নবী (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনকে (রা.) তার বংশীয় ১৭ জন সদস্যসহ মোট ৭২ জনকে পৈশাচিক নির্যাতনের মাধ্যমে শহিদ করা হয়েছিল। এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞ  ঘটিয়ে বেতনভূক্ত তিনশ আলেম দিয়ে ফতোয়া প্রদান করেছিল যে, ইমাম হোসাইন রাষ্ট্রদোহী, তাই তাকে হত্যা করা জায়েজ (নাউজুবিল্লাহ)। তারা সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যার রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল। কিন্তু আহলে বাইতের প্রেমিকদের বিভিন্ন শোকানুষ্ঠানের জন্য তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। মানুষের কাছে প্রকৃত সত্য এখন উন্মোচিত।

তিনি আরও জানান, অষ্টগ্রামে প্রায় ১৬২ বছর ধরে মহরমের শোকানুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। এই শোকানুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা শহিদগণের প্রতি সম্মান ও মিথ্যার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে থাকি। মহরম মানুষকে ধৈর্য, ত্যাগ ও ন্যায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং সত্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করে। আশুরা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে সুশৃঙ্খলভাবে ১০ দিনব্যাপী মহরমের শোকানুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করায় পাঁচ ইউনিয়নের হোসাইনীপ্রেমিক ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য করুন