মারুফ আহমেদ: ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর ১৭ বছর ধরে শরীরে বহন করে চলা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা সহ্য করে কষ্টকর জীবন কাটাচ্ছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আকবরনগর গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী নাজিম উদ্দিন (৪৫)। গ্রেনেড হামলার সময় মঞ্চের সামনে থাকা নাজিম উদ্দিনের শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। পরবর্তী সময়ে প্রথমে ঢাকা ও পরে কলকাতায় অস্ত্রোপচার করে কিছু স্প্লিন্টার বের করা সম্ভব হলেও বেশীরভাগ স্প্লিন্টারই শরীরে থেকে যায়। অর্থাভাবের কারণে তিনি পূর্ণ চিকিৎসা নিতে পারেননি।
ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করে ভৈরবের গজারিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন জানান, স্থানীয়ভাবে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে প্রিয় নেত্রী আইভি রহমানকে প্রধান অতিথি করতে তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট। ঢাকায় গিয়ে জানতে পারেন নেত্রী বাসায় নেই, পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভায় গেছেন তিনি। তাই তিনিও চলে যান ওই জনসভায়।
সেদিনের কথা বলতে গিয়ে নাজিম উদ্দিন জানান, বিকেল চারটার দিকে তিনি পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভায় পৌঁছান। জনসভায় জিল্লুর রহমান শেখ হাসিনার সঙ্গে ট্রাকের মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন। আইভি রহমান ট্রাকের সামনে অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে মাটিতে বসেছিলেন। তিনি বসেছিলেন আইভি রহমানের কাছে। এক সময় আইভি রহমান তাকে এক বোতল পানি আনতে বলেন। তিনি পানি নিয়ে আসার পর আইভি রহমান পানির বোতলটি ট্রাকের মঞ্চে থাকা জিল্লুর রহমানের হাতে দিতে বলেন। পানির বোতলটি দিয়ে ট্রাকের সামনে থেকে আইভি রহমানের কাছে ফিরে আসতেই হঠাৎ কয়েকটি বিকট শব্দে জনসভা এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। মানুষ অনেকেই আহত ও আতংকিত হয়ে আর্তনাদ করে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। মুহূর্তেই দেখেন আইভি রহমান পায়ে গ্রেনেডের আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছেন। এক সময় তিনিও গ্রেনেডের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ওই রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে তার। ডান পায়ে গুরুতর জখমসহ শরীর জুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করেন তিনি।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে নাজিম উদ্দিন জানান, ঢাকায় হাসপাতালে নয় দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাটানোর পর দলীয় সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পিয়ারল্যাস হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ডা. পি. কে ব্যানার্জী ও ডা. এস. এ ভেরার তত্ত্বাবধায়নে দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে ও পরে কলকাতায় অস্ত্রোপচার করে কিছু স্প্লিন্টার বের করা হয়। অবশিষ্ট স্প্লিন্টারগুলো বের করে আনতে এক বছর পর আবার সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এবং পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য টাকার অভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাকি স্প্লিন্টার বের করাতে তিনি আর কলকাতায় যেতে পারেননি। বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কষ্ট করে চলাফেরা করতে হচ্ছে তাকে। শরীরের বিভিন্ন অংশে থাকা স্প্লিন্টারের ব্যথা সহ্য করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
নাজিম উদ্দিন জানান, চিকিৎসা সম্পন্ন করতে প্রয়োজন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। যা তার ভিটেমাটি বিক্রি করেও সম্ভব নয়। সুচিকিৎসার অভাবে নাজিম তাই যন্ত্রণাময় জীবনকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ঘটনার বিচারের রায় হয়েছে। রায়ে ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের কঠোর বিচার হলেও আজও আদালতের রায় কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বিচারের রায় বহাল রেখে দ্রুত অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন গ্রেনেড হামলায় আহত আওয়ামী লীগ কর্মী নাজিম উদ্দিন।