১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা লগ্নেই তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমাতেও এর ঢেউ লেগেছিল। এখানে মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামী পার্টির ছিল বিশাল প্রভাব ও প্রাধান্য। তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই কিশোরগঞ্জে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল।
কিশোরগঞ্জ শহরের ইসলামিয়া ছাত্রাবাস, রথখলার ময়দান, গুরুদয়াল কলেজ, খেলার মাঠ (স্টেডিয়াম), তরুণ লাইব্রেরি ইত্যাদি স্থান ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। পুরানথানার তরুণ লাইব্রেরিতে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতারা মতবিনিময় ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি স্থির করতেন। ভাষা আন্দোলনের সূচনা লগ্নে মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামী পার্টির নেতারা বাংলাবিরোধী একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এ সংগঠনটিকে বাংলা ভাষার বিরোধিতা ও ভাষা আন্দোলনের কর্মীদের বাধা প্রদানে নিয়োজিত করা হয়। প্রথমদিকে তারা উর্দুর পক্ষে শহরের মোড়ে মোড়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সে সময় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, রফিকউদ্দিন ভূইয়া, অধ্যাপক নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, ওয়ালী নেওয়াজ খান, আশরাফুদ্দীন মাস্টার, শামসুদ্দিন আহম্মদ, আমিনুল হক, ছাত্রনেতা আবু তাহের খান পাঠান প্রমুখের তৎপরতায় তাদের হীন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়।
১৯৫২ সনের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানালে কিশোরগঞ্জের ছাত্রনেতা আবু তাহের খান পাঠান, হেদায়েত হোসেন, এ. বি মহিউদ্দিন গোলাম মওলা), মু. আবু সিদ্দীক, মিছিরউদ্দীন আহমেদ, আবদুল মতিন, নজরুল ইসলাম, ছাবিরউদ্দিন আহমেদ, শাহাদাৎ চৌধুরী, আব্দুল কাদের প্রমুখের নেতৃত্বে সর্বদলীয় মহকুমা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদের আহ্বায়ক করা হয় হেদায়েত হোসেনকে। অন্যদিকে করিমগঞ্জ থানায় মিছিরউদ্দীন আহমেদ, অষ্টগ্রামে কাজী আব্দুল বারী ও বাজিতপুরে আনিসুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। একইভাবে ভৈরব, পাকুন্দিায়াসহ অন্যান্য থানায়ও সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি এলাকায় ডাক্তার আব্দুস সোবহান ও ডাক্তার মফিজ উদ্দিন তরুণ ছাত্রদেরকে পরামর্শ ও সাহস দিয়ে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি থেকে মিছিরউদ্দীন আহমেদ–এর নেতৃত্বে একটি মিছিল কিশোরগঞ্জে আসে। পথে লোকজন হাত নেড়ে ও করতালি দিয়ে সমর্থন জানায়। বেলা ১ টার দিকে মিছিলটি আজিম উদ্দিন হাই স্কুলে আসে। পরে ঐ স্কুলের ছাত্র মু. আবু সিদ্দীকের সভাপতিত্বে সভা হয়। এতে মিছিরউদ্দীন আহমেদ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঐ স্কুলের ছাত্র মাহফুজুল হাকিম শিতু, কুতুবউদ্দিন, আফতাবউদ্দিনসহ আরো কয়েকজন। ১৯ ফেব্রুয়ারি মিছিরউদ্দীন আহমেদ জঙ্গলবাড়ি স্কুল ও মাছিমপুর প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রদের মিছিল নিয়ে বেলা ১১ টায় করিমগঞ্জে যান। পথে মিলিত হন গুরুদয়াল কলেজের দুজন ছাত্রনেতা ফুলে হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক। মিছিলটি করিমগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করতেই বাজারে মিছিলের দুদিকে বিপুল জনতা দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। কিন্তু করিমগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুদ্দোজা তার ছাত্রদেরকে বের হতে দিচ্ছিলেননা। তখন ছাত্রদের মধ্যে আব্দুল হামিদ, আলী আসগর, মহিউদ্দিন খান ও নাজিরুল হক জানালা টপকে বেরিয়ে আসেন। পরে স্কুল মাঠে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সকলেই মিছিল সহকারে যান গুজাদিয়া হাই স্কুলে। সেখানেও একই বাধা। প্রধান শিক্ষক মৌলানা আব্দুল জব্বার তাদেরকে স্কুলের মাঠেই ঢুকতে দিচ্ছিলেননা। নিষেধ অমান্য করে জোর করেই স্কুলের মাঠে ঢুকে পড়েন তারা। এ স্কুলের একজন ছাত্রকে সভাপতি করে স্কুল প্রাঙ্গণে সভা হয়। এ সভাতেই মিছিরউদ্দীন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ‘করিমগঞ্জ থানা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি করিমগঞ্জ থানা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে থানার সমস্ত স্কুলের ছাত্ররা করিমগঞ্জ হাই স্কুলের মাঠ থেকে মিছিল করে বেলা ১ টার দিকে কিশোরগঞ্জ শহরে পৌঁছে। শহরের সমস্ত স্কুল ও কলেজের ছাত্ররাও তাদের সাথে মিলিত হয়। বেলা ৩ টায় ইসলামিয়া ছাত্রাবাসের সামনে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রনেতা মাসুদুল আমিন খান মাখন। বক্তৃতা করেন আবু তাহের খান পাঠান, হেদায়েত হোসেন, শহীদুল হক, ফুলে হোসেন, মু. আবু সিদ্দীক, মিছিরউদ্দীন আহমেদসহ অনেকেই। সভা থেকে মহকুমার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়। সকল ছাত্র–ছাত্রীর কালোব্যাজ ধারণ ও কালো পাতাকাসহ নিজ নিজ এলাকায় মিছিল ও সভা করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। পরে পুরানথানাস্থ তরুণ লাইব্রেরিতে কর্মিসভায় মিলিত হয়ে মহকুমা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিলে কিশোরগঞ্জের সর্বত্র শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রমিছিলের ওপর গুলিবর্ষণে শহীদ হলেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ও আরো অনেকে। এ খবর কিশোরগঞ্জে পৌঁছে পরদিন অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি। বিকালে গুরুদয়াল কলেজ হোস্টেল চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন করে শোকসভা হয়। প্রত্যেক মসজিদ–মন্দিরে শহীদদের আত্মার মাগফিতার কামনা করার জন্য আবেদনপত্র প্রেরণ ও মাইকিং করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে ছাত্র–জনতার মিছিলে ন্যাশনাল গার্ড নামধারীরা হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। বক্তৃতা করেন আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, রফিক উদ্দিন ভূইয়া, হেদায়েত হোসেন, আবু তাহের খান পাঠান, আশরাফুদ্দীন মাস্টার, খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ, শামসুদ্দিন আহম্মদ, মু. আবু সিদ্দীক ও মিছিরউদ্দীন আহমেদ। ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা করে নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি করে বিকাল ৩ টায় রথখলার মাঠে মাটি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে পুষ্পস্তবক অর্পন ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন হেদায়েত হোসেন এবং প্রধান বক্তা ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রনেতা আবু তাহের খান পাঠান। ৫ মার্চ খেলার মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক নরেন ঘোষ, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, আশরাফুদ্দীন মাস্টার ও আবু তাহের খান পাঠান।
১৯৫৩ সনের ২১ ফেব্রুয়ারি মহকুমা কর্মিপরিষদের উদ্যোগে নগ্নপদে প্রভাতফেরি করে রথখলার মাঠে মাটির তৈরি শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন এবং শপথবাক্য পাঠ করা হয়। বিকাল ৪ টায় হয় জনসভা। সভাপতি ছিলেন আশরাফুদ্দীন মাস্টার। বক্তব্য রাখেন হেদায়েত হোসেন, আবু তাহের খান পাঠান, মিছিরউদ্দীন আহমেদ ও আরো কয়েকজন। ১৯৫৩ সনের শেষদিকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন কিশোরগঞ্জে আসেন নির্বাচনী সফরে। আবু তাহের খান পাঠানের নেতৃত্বে ছাত্ররা তাকে কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। ঐ মিছিলে মুসলিম লীগের গু–বাহিনী হামলা করলে বেশ কয়েকজন আহত হন।
১৯৫৪ সন। মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। করিমগঞ্জ–তাড়াইল আসনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ছিলেন জমিয়ত আলী। মু. আবু সিদ্দীক, মিছিরউদ্দীন আহমেদ, আলী আসগরসহ অনেকেই তখন নিজ এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে এবং কিশোরগঞ্জ এসে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেছেন। কিশোরগঞ্জ শহরের তরুণ লাইব্রেরিতে ১১ ফেব্রুয়ারি বিকালে শহীদ দিবস উদযাপন পরিষদের সভায় এবারের শহীদ দিবস বড় আকারে খেলার মাঠে করার সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতিত্ব করবেন আশরাফুদ্দীন মাস্টার। প্রধান বক্তা বিপ্লবী ছাত্রনেতা আবু তাহের খান পাঠান। প্রস্তুতি চলছে পুর্ণোদ্যমে। ১৫ ফেব্রুয়ারি আবু তাহের খান পাঠানকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে ছাত্র–জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তার মুক্তির দাবিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভা আহ্বান করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় আশরাফুদ্দীন মাস্টার, এ.কে. খোরশেদ আহাম্মদ (পাকুন্দিয়া) ও ভৈরবের গোলাম মোস্তফা চৌধুরীকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি নবম শ্রেণির ছাত্র মিছিরউদ্দীন আহমেদকে নিজ বাড়ি করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি থেকে গেফতার করা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে খেলার মাঠে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাতে তাড়াইল থানা থেকে গঙ্গেশ সরকারকে গ্রেফতার করে আনা হয় জেলে। কারাজীবনের তৃতীয়দিন ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস। রাজবন্দিরা জেলের ভিতরেই ইট দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে পুষ্পস্তবক অর্পন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। জেলে যাওয়ার সময় রাস্তায় যে সব পুষ্পমাল্য দেয়া হয়েছিল, সেগুলো শহীদ দিবসের জন্য রেখে দিয়েছিলেন তারা।
সারা পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্টের একচেটিয়া বিজয় হলো। সারাদেশে রাজবন্দিদেরকে মুক্তি দিতে লাগলো। কিশোরগঞ্জ জেলে আটক রাজবন্দিদের মুক্তির আদেশ এলো ১৭ মার্চ। জেল অফিসে মুক্তির অর্ডার যখন পৌঁছলো, তখন সন্ধ্যা ৬ টা বেজে গেছে। কাজেই মুক্তি দেয়া হয় পরদিন সকালে। মিছিরউদ্দীন আহমেদ ও গঙ্গেশ সরকার ছাড়া ছয়জনকে মুক্তি দেয়া হলো। এ দুজনকে মুক্তি হলো আরো কয়েকদিন পর। তাদের মুক্তির দিন জঙ্গলবাড়ির ছাত্র ও যুবকরা ডাক্তার আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে ফুলের মালা নিয়ে মিছিল করে এসে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। মুক্তির দিন বিকালে কিশোরগঞ্জ খেলার মাঠে রাজবন্দিদেরকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল।
যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়ের পর শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হককে প্রধানমন্ত্রী করে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। কিছুদিন পর প্রাদেশিক শিল্প–বাণিজ্য ও দুর্নীতি দমন বিভাগের মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আসেন কিশোরগঞ্জ সফরে। সকালে কর্মিসভা করেন রঙমহল সিনেমা হলে। বিকালে জনসভা কিশোরগঞ্জ খেলার মাঠে। সরকারিভাবে মঞ্চ তৈরি করা হয়। মঞ্চের সামনে অনেক দূর পর্যন্ত সুতলির বেড়া দেয়া হয়েছিল। মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুদ্দীন মাস্টার মঞ্চের শৃংখলা রক্ষা ও জনগণকে শান্ত রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আবু তাহের খান পাঠান, মিছিরউদ্দীন আহমেদসহ কয়েকজনকে। মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন সভাপতি জিল্লুর রহমান, আশরাফুদ্দীন মাস্টার, খুরশিদ উদ্দিন, শামসুল হক গোলাপ মিয়া, আমিনুল হক ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার। শেখ মুজিবুর রহমান মঞ্চে আসন গ্রহণ করে জানতে চাইলেন, মানুষ এত দূরে কেন? তরুণ ছাত্রনেতা মিছিরউদ্দীন তখন বললেন, ‘এসডিও সাহেব এ ভাবেই মঞ্চ তৈরি করেছেন।’ তখন তিনি বললেন, ‘তোরা কোথায় ছিলি, পাঠান কোথায় ছিল?’ সব লোককে বলে দে, আমার কাছাকাছি এসে বসতে। নেতার নির্দেশের পর হুড়হুড় করে সুতলির বেড়া ছিঁড়ে জনগণ মঞ্চের কাছে এসে বসেছিল।
কয়েক মাস যেতে না যেতেই কেন্দ্রিয় সরকারের নির্দেশে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে জারী করা হয় ৯২ (ক) ধারার শাসন। সারা পূর্ব পাকিস্তানে চালালো ব্যাপক ধর পাকড়। অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেলেন। কিশোরগঞ্জে গ্রেফতার হয়েছিলেন কমরেড নগেন সরকার, কমরেড ওয়ালী নেওয়াজ খান, কমরেড জমিয়ত আলী, কমরেড গঙ্গেশ সরকার, আব্দুল মান্নান, আশরাফুদ্দীন মাস্টার, আবু তাহের খান পাঠান, মু. আবু সিদ্দীক ও আরো কয়েকজন। মিছিরউদ্দীনের নামেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৎকালীন ছাত্র মোজাম্মেল হক চুন্নু তার নিজ এলাকা করিমগঞ্জে এসে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে সহায়তা করেছেন। ভাষা আন্দোলনের ওপর কবিতা ও গান রচনা করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও সাহস জোগাতেন পুলেরঘাটের হায়দার আলী। সে সময় আবু তাহের খান পাঠানের জ্বালাময়ী বক্তৃতা ও হায়দারের গান এ দুয়ে মিলে আন্দোলন বেগবান হয়েছিল।
লেখক: সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, সম্পাদক, নিউজ একুশে