ঢাকাশুক্রবার , ৮ এপ্রিল ২০২২
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হাওরে বন্যার পর ধানে ‘চিটা’ আতংক

প্রতিবেদক
-
এপ্রিল ৮, ২০২২ ৪:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

হাওর প্রতিনিধি: বন্যার পর হাওরে আরেক আতংক হিসেবে দেখা দিয়েছে ‘ধানে চিটা’। আগাম বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া এবং উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় হাওরে অনেক কৃষক ব্রি-২৮ ধানের জাত চাষ করেছিলেন। কিন্তু এবার এ জাত চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এ জাতটির বেশিরভাগ জমির ধানেই এখন চিটা।

চিটা দেখা দেওয়ায় অনেক কৃষক তাদের জমি থেকে ধান কেটে আনার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা বলছেন, জমির ধান কেটে আনতে যে পরিমাণ টাকা শ্রমিককে দিতে হবে, তার অর্ধেক টাকার ধান বিক্রি হয় কিনা সন্দেহ রয়েছে

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলছেন, বীজের সমস্যার কারণে এমনটা হতে পারে। তবে কৃষি অফিস বলছে, ব্লাস্ট রোগের প্রবণতা ব্রি২৮ জাতে বেশি পড়ে, এজন্য আমরা এই জাতটা চাষ না করার জন্য কৃষকদেরকে নিরুৎসাহিত করে থাকি। তারপরেও আগাম বন্যার ভয়ে কৃষকেরা বেশিরভাগ নিচু জমিতে এই জাত চাষ করেন। 

ইটনা উপজেলার শিমুলবাঁক গ্রামের কৃষক মিলন মিয়া চার একর জমিতে ব্রি২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, জমিতে বেশিরভাগ ধানের ভিতরে চাল নেই। চালের বদলে চিটা পড়েছে। যে জমিতে ধান পাওয়ার কথা ১৫০১৬০ মণ, সে জমিতে এখন কাঁচিও চলবেনা৷ তাছাড়া জমি কেটে এনে ধান মাড়াই করে বিক্রি করলে যে টাকা আসবে, তার চেয়ে বেশি টাকা লাগবে শ্রমিকের মজুরি। তিনি বলেন, না পারতেছি জমির আশা ছেড়ে দিতে, না পারতেছি কেটে আনতে। মিলন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এই জাতের ধান চাষ করে তিনিসহ অন্য কৃষকেরা যেমন ভালো ফলন পেয়েছেন, তেমনি আগাম ঘরেও তুলতে পেরেছেন। কিন্তু এবার অনেক কৃষকের জমিতে এই জাতের ধান চিটা হয়ে গেছে।

বড়িবাড়ি হাওরের জিরাতি কৃষক আব্দুল গণি। তার বাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলার সাকুয়া গ্রামে। তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ জমিই নিঁচু। এজন্য আগাম বন্যার ভয়ে ব্রি২৮ ধানের জাত চাষ করি। ফলনে ব্রি২৯ ধানের চেয়ে কম হলেও এই জাতের ধান পেকে যায় আগেই৷  দামও ভাল যায় বলেই এই ধানের বিকল্প চিন্তা করেন না তারা। তিনি বলেন, কিন্তু কে জানতো এইবার এই দশা হবে

ইটনার ছিলনী গ্রামের কৃষক মামুন মিয়া বলেন, হাওরের কৃষকেরা উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করে থাকেন। সকল উচ্চফলনশীল জাতের বেশির ভাগ ধানই দেরিতে ঘরে ওঠে। তবে ব্রি২৮ ধান তুলনামূলকভাবে আগে ঘরে ওঠে। তাই উচ্চফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে ব্রি২৮ বেশি জনপ্রিয়। ৩০ শতাংশ জমি কেটে গতবছর  যে পরিমাণ ধান হয়েছিল, এবার তার চারভাগের একভাগও হয়নি বলে তিনি জানান।

মিঠামইনের গোপদিঘী ইউনিয়নের বজকপুর হাওরে গিয়ে দেখা যায়, চিটা হয়ে যাওয়া জমিতে স্প্রে করছেন কৃষক আবু কালাম। তিনি বলেন, ধানের ভিতরে চালের বদলে চিটা পড়েছে। কিছুটা হলেও যদি সুফল পাওয়া যায়, এ আশায় কৃষি অফিসারের পরামর্শে জমিতে স্প্রে করছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৪২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, লাখ ২৫ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে উফসি ৬২৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম নিকলী এর চার উপজেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমির ধান নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে। 

জেলা কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা . মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, এই রোগটি আমন বোরো উভয় মৌসুমেই হতে পারে। ধানের চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোন সময় রোগটি হতে পারে। রোগটি বাতাস, কীটপতঙ্গ আবহাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। রাতে ঠাণ্ডা, দিনে গরম সকালে পাতলা শিশির জমা হলে রোগ দ্রুত ছড়ায়। হালকা মাটি বা বেলে মাটি যার পানি ধারণ ক্ষমতা কম, সেখানে রোগ বেশী হতে দেখা যায়। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম পটাশ সার দিলে রোগের আক্রমণ বেশি হয়। দীর্ঘদিন জমি শুকনা অবস্থায় থাকলেও রোগের আক্রমণ হতে পারে। তিনি বলেন, রোগ হলে শীষের গোড়া অথবা শীষের শাখা প্রশাখার গোড়ায় কালো দাগ হয়ে পঁচে যায়,ধান কালো চিটাযুক্ত হয়। এছাড়াও শীষ অথবা শীষের শাখা প্রশাখা ভেঙে পড়ে

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.ছাইফুল আলম বলেন, ব্রি২৮ জাতের ধান পুরনো জাতের তাই আমরা কৃষকদেরকে এই জাতটি চাষ করতে নিরুৎসাহিত করে থাকি। কিন্তু অনেকে আগাম বন্যার ভয়ে এই জাতের ধান চাষ করেন। তিনি বলেন, ব্রি২৮ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট গতবছরও  হয়েছিল। এক্ষেত্রে কৃষকদেরকে মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি

উল্লেখ্য, এবার আগাম বন্যায় হাওরে ৩২০ হেক্টর বোরো জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য করুন