নিজস্ব প্রতিবেদক: মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লি ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে করেছেন। সকাল ১০টায় জামাত শুরু হয়।
সকাল থেকেই দলে দলে মুসল্লিরা ঈদগাহের দিকে আসতে থাকেন। সকাল ৯টার মধ্যেই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জামাত শুরুর প্রায় আধাঘন্টা আগে থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। এরপরও ঈদগাহের দিকে মুসল্লির ঢল নামে। ঈদগাহ পূর্ণ হয়ে পাশের রাস্তা, ব্রিজসহ আনাচে কানাচে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেই মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরু হলে প্রচণ্ড বজ্রপাতে ঈদগাহের বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা হলে কিছুক্ষণের জন্য মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ইমামের সঙ্গে মুসল্লিরা মোকাব্বিরের ন্যায় তাকবির পড়েন। ফলে মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও নামাজে কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় এসেছেন। দূরের মুসল্লিরা ঈদের দু-একদিন আগেই এসে অবস্থান নেন বিভিন্ন মসজিদ, হোটেল এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।
এবার অসুস্থতার কারণে নির্ধারিত ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ আসতে না পারায় ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জ বড় বাজার শাহাবুদ্দিন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ। নামাজ শেষে দেশ ও মুসল্লিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এছাড়াও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেশের কল্যাণে আরও বেশি অবদান রাখতে দোয়া করা হয়।
করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর শোলাকিয়ায় এবার ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ঈদগাহের জন্য এটি ১৯৫ তম ঈদুল ফিতরের জামাত।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। নির্বিঘেœ ঈদ জামাত সম্পন্ন করতে শোলাকিয়া ঈদগাহে চারস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও মাঠে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন থাকে।
এ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকে। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত রাখা হয়।
দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ–ময়মনসিংহ ও ভৈরব–কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ও পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম, স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হন।
জঙ্গি হামলার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদেরদিন শোলাকিয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।