আদালত প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এ রায় দেন। রাষ ঘোষণার সময় একমাত্র আসামি মো. মামুন মিয়া (৩৩) পলাতক ছিলেন।
আসামি মো. মামুন মিয়া কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়নের গাগলাইল গ্রামের মৃত মতি মিয়ার ছেলে।
কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর স্পেশাল পিপি এডভোকেট এম এ আফজল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাগলাইল গ্রামের মৃত মতি মিয়ার ছেলে মামুন মিয়ার সাথে একই উপজেলার তারাপাশা এলাকার মিনার আলম খানের মেয়ে নন্দিনীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকে স্বামী মামুন স্ত্রী নন্দিনীকে যৌতুকের জন্য অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেন। নন্দিনী স্বামীর নির্যাতনের কথা তার মাকে জানালে তার মা গোপনে মেয়ের জামাই মামুনকে কিছু টাকা দেন। কিছুদিন পরে মানুন আবারও নন্দিনীকে তার বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। নন্দিনী বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মামুন নন্দিনীকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে।
২০১৩ সালে ২০ এপ্রিল মামুন তার তারাপাশা এলাকার দিদার মিয়ার ভাড়া বাসায় স্ত্রী নন্দিনীর কাছে আবারও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবী করেন। নন্দিনী টাকা এনে দিতে পারবেনা জানালে মামুন নন্দিনীকে মারপিট করে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা নন্দিনীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘটনার পাঁচদিন পর ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নন্দিনীর মৃত্যুর সময় তাদের আট মাস বয়সের একটি কন্যা সন্তান ছিল।
এ ঘটনায় নন্দিনীর বাবা মিনার আলম খান বাদী হয়ে স্বামী মামুনকে একমাত্র আসামি করে ১ মে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্ত শেষে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার তৎকালীন এসআই মো. ফজলুল হক একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।