নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অনেকেই বগির নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল ৩ টা ১০মিনিটের দিকে আন্তনগর এগারসিন্দুর গোধুলী ট্রেনের সঙ্গে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেনের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাটি ঘটে।
রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার এগারসিন্দুর গোধুলী ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বেলা ১২ টা ৫০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে জংশনে যাত্রাবিরতি দেয়। পরে ভৈরব থেকে ৩ টা ০৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাবার পথে ভৈরবের জগন্নাথপুরে আউটার সিগন্যালের কাছে বিকাল ৩ টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি কনটেইনারবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে এগারসিন্দুর গোধুলী ট্রেনের পিছনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয় জনতা উদ্ধার তৎপরতা চালায়। দুর্ঘটনার পর ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।
সিগন্যালে ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করছেন নিরব নামে এক ট্রেনযাত্রী। তিনি জানান, একটি ট্রেন পাস না হওয়া পর্যন্ত এ লাইনে আর কোনো ট্রেন আসার কথা নয়। অথচ তাই ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের সিগন্যাল রুমে কাউকে পাওয়া যায়নি। সিগন্যাল রুমটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর ৭০ জন আহত রোগীকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরমধ্যে গুরুতর আহত ২০ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। চারজনকে ভর্তির জন্য রাখা হলেও তিনজন চলে গেছেন। অজ্ঞাত একজন ভর্তি রয়েছেন এখনো।
ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আজিজুল হক জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। আটকে পড়া অনেককেই জীবিত উদ্ধার করেন তারা।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয় অনেকেই উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতদের কেউ হয়তো হাসপাতালে মারা যেতে পারেন। সে কারণে প্রাথমিকভাবে নিহত ও আহতদের সঠিক সংখ্যা জানানো সম্ভব হচ্ছেনা।
দুর্ঘটনার পর থেকে ভৈরব–ঢাকা এবং ভৈরব–সিলেট রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ভৈরবের দিকে রওনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা: ভৈরবে বসবাসকারী বাজিতপুরের কলেজছাত্র শাহরিয়ার রহমান জানান, তার স্ত্রীর বড় ভাই নিরব এগারসিন্দুর ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি গিয়ে নিরবকে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, ১৫টি লাশ তিনি নিজে দেখেছেন। ট্রেনের নিচে চাপা পড়া আরও কয়েকজনকে দেখেছেন, যাদের কারও হাত বা পা বের হয়ে রয়েছে। ট্রেনটি পুরোপুরি উদ্ধার করতে পারলে আরও লাশ পাওয়া যাবে। তিনি নিজে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে চাইলেও র্যাব ও পুলিশ তাকে যেতে দেয়নি। সেখানে অনেক লোক ভিড় করায় তাদের সামলাতে র্যাব ও পুলিশকে হিমশিম খেতে হয় বলেও জানান তিনি। সিগন্যালের ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে ট্রেন যাত্রীদের কাছ থেকে জেনেছেন তিনি।
আহতদের রক্ত দিতে প্রস্তুত অনেকেই: বিভিন্ন মাধ্যমে ভৈরবে রেল দুর্ঘটনার খবর জেনেছেন কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকার উবায়দুল হক জুয়েল নামে এক তরুণ। কিশোরগঞ্জ ব্লাড ব্যাংকের সদস্য তিনি। এ ব্লাড ব্যাংকে দুই হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। তিনি জানান, দুর্ঘটনার খবর জানার পরই ফেসবুকে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে কারও রক্তের প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, মানবিক কারণেই তিনি রক্ত দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। যে কারও রক্তের প্রয়োজনে তারা সাড়া দিতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
নিহতদের জন্য ২৫ হাজার টাকা অনুদান: জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।