নিজস্ব প্রতিবেদক: মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এছাড়া উচ্চশিক্ষার কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জাতীয় বাজেটের ছয় শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে রবিবার (৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হক ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আ ন ম মুশতাকুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইমান আলী। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আলমগীর বলেন, বর্তমানে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশেরও কম। শিক্ষাখাতে এতো কম বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে নেই। এই স্বল্প বাজেট দিয়ে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ্য করে তিনি আরও বলেন, দেশে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রæততম সময়ে একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামোর মাস্টার প্ল্যান তৈরি এবং সে অনুসারে স্মার্ট ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক নূরুজ্জামান বলেন, প্রাচীন গ্রিসে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন গ্রিসের শিক্ষার মান ছিল আমাদের টুল প্রথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চতুর্থ শিক্ষা বিপ্লব অনুসারে শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়ন দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ^বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে চায়।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় চমৎকারভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার উপযুক্ত পরিবশে নিশ্চিত এবং নিরাপদ ও স্মার্ট ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্ব^র মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ স্থাপনকল্পে আইন পাস হয়। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৩ সালের ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ এই ক্যাম্পসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভ‚মি অধিগ্রহণ, সীমানা প্রাচীর ও ভ‚মি উন্নয়নের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পাশ হয়েছে। ২০২৪ ও ২৫ এই দুই বছরের মধ্যে এ কাজগুলি সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্লান ও অবকাঠামোগত মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী ৫০ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ টি বিভাগ, ৬টি অনুষদ, ৪টি ইনস্টিটিউট, ৪টি সেন্টার এবং ৯টি বিশ্বমানের বিশেষায়িত গবেষণা কেন্দ্রে উন্নিত হবে। বর্তমানে প্রতি বিভাগে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী নিয়ে চারটি বিভাগে–কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইংরেজি, গণিত ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দুটি ব্যাচে ১২০ জন করে ২৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তৃতীয় ব্যাচের ভর্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পন্ন করা হয়। শিক্ষকসংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৪ জন, দ্রæত এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দরভাবে এগিয়ে চলেছে।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ক্যাম্পাস থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা ও বঙ্গবন্ধুর মুর্যালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।