রাকিবুল হাসান রোকেল: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসভাধীন পাইক লক্ষীয়া এলাকার হাজী মো. মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খাতাপত্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০। বাস্তবে ৩০ জনের বেশি নেই। দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে যায়না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীশূন্য বিদ্যালয়ে গল্পগুজব করে চলে যান শিক্ষকরা।
গত ৯ জুন বেলা পৌনে ১২ টায় সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে বিদ্যালয়টিতে। অফিসকক্ষে তিনজন শিক্ষককে দেখা গেল গল্পগুজব করতে। কিন্তু ক্লাশরুমে কোনো শিক্ষার্থী নেই। এর কিছুক্ষণ পর এলেন প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নূরুল আফসার জানান, প্রাক প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ক্লাশ কিছুক্ষণ আগে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আর অন্য ক্লাশের শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ পর চলে আসবে। হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীদের হাজিরা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ভুলে হাজিরা খাতা ক্লাশে নেওয়া হয়নি। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে আনা হলেও কিছুক্ষণ থেকে তারা চলে যায়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জানান, তারা টিফিন করতে গেছে।
প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ছয়জন। কমিটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান রাসেলের মা হোসনে আরা বেগম ঝরনা এ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তারও সহকারী শিক্ষক।
রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯০ সনে। আর সরকারিকরণ হয় ২০১৩ সনে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টির এমন দৈন্যদশা বলে জানান এলাকাবাসী। বিদ্যালয়টির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পার্শ্ববর্তী একাধিক মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি রয়েছে। শুধু উপবৃত্তির আশায় অনেককেই এ বিদ্যালয়ে ভর্তি দেখানো হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ জন উল্লেখ্য করলেও এলাকাবাসী জানান, মোট শিক্ষার্থী ৩০ জনের বেশি হবেই না। আবু কাউসার নামে একজন অভিভাবক জানান, তার মেয়ে পাকুন্দিয়া মডেল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক সুপারিশ করে তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সে ক্লাশ করে মাদ্রাসায়। প্রধান শিক্ষক বলেছেন, মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ুক এখান থেকে সরকারি সার্টিফিকেট নিয়ে রাখলে ভালো হবে। তিনি প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান, একই সময়ে যদি দুই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হয়, তখন কী করবো? জবাবে প্রধান শিক্ষক জানালেন, সঠিক সময়ে মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিবে, আর স্কুলেরটা দিবে বাড়িতে বসে। নিজাম উদ্দিন নামে এক গ্রামবাসী জানান, স্কুলটিতে হাতে গুণে ১৫ জন শিক্ষার্থীও পাওয়া যাবেনা। তবে স্কুলের খাতায় অনেক বেশি দেখা যাবে। শিক্ষার্থী কম থাকা প্রসঙ্গে গ্রামের অনেকেই জানান, পড়ালেখার মান ভালোনা, তাছাড়া শিক্ষকদেরও তেমন আগ্রহ নেই। মাসের বেশিরভাগ দিনই কোনো ক্লাশ হয়না। শিক্ষার্থী না এলে শিক্ষকরা গল্পগুজব করে চলে যান বলে জানান কেউ কেউ।
জালাল উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এ স্কুলের শিক্ষকরা উপবৃত্তির কথা বলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করেন, কিন্তু পরে আর ক্লাশ নিতে দেখা যায়না। স্কুলটা সবসময় খালিই থাকে। শিক্ষকরা ঘুরে ফিরে চলে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল হক রাকিব জানান, কর্মকর্তারা বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদেরকে ডেকে আনেন শিক্ষককেরা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান রাসেল অভিযোগ ম্বীকার করে জানান, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনে পড়ে। আর পরীক্ষা দেয় সরকারি স্কুল থেকে। এমনটা সব স্কুলেই হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম জানান, ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া হবে।