বিপুল সম্পদ ও জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে হাওর অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু। তার চিঠিটি হুবহু নিউজ একুশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
পৃথিবীর বেসিন সাদৃশ্য জনপদ এই হাওরাঞ্চল। আর–দশটা লোকালয়ের চেয়ে ভিন্ন গঠন ও জীববৈচিত্র্যে ভরা প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি হাওরাঞ্চলের বিপুল সম্ভাবণাকে কাজে লাগিয়ে, দীর্ঘমেয়াদি দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশাল জমি ও জলাভূমি এবং জনশক্তির সমন্বয়ে সম্মৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে অন্যতম সহায়ক ভূমি হবে কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চল।
দেশের সীমিত সম্পদ ও বিশাল জনশক্তির সঠিক ব্যবহারের নানামুখি বৈশ্বিক প্রতিকূলতা মোকাবিলায় আমাদের আরো বেশি সমকালীন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যঘাটতি মোকাবিলায় হাওরাঞ্চলের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আমাদের নীতিনির্ধারকদের সমীপে আমার ভাবনা পেশ করছি:
হাওরাঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণে প্রকৃতির ধরণ ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করে কাজ করতে হবে।
যথাযথ জনবল পদায়ন এবং প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে গড়তে হবে হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে ।
হাওরাঞ্চলে মৎস্য ও কৃষি ইনিস্টিটিউট এবং কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্রকারখানা গড়ে মানবসম্পদকে কাজে লাগতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হাওরাঞ্চলের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা ও পাঠ পরিক্রমা চালু করা যেতে পারে।
হাওরাঞ্চলে প্রবাহিত নদ–নদী, খাল–নালা, বিল ও পুকুরগুলো খননের মাধ্যমে জলবদ্ধতার নিরসন ও মৎস্য সম্পদ বাড়াতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনরোধে হাওরে ব্যাপক হারে পানি সহিষ্ণু বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বনায়ন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পশু–পাখি ও মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি দূরীভূত করতে হবে জ্বালানী সংকট।
হাওরাঞ্চলের কৃষকদের সনাতনী পদ্ধতির বাইরে আধুনিক চাষাবাদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
শুধু ধান চাষে নির্ভরশীল না হয়ে বর্ষার পানিকে খাদ্য উৎপাদনে বহুমুখি ব্যবহারের চিন্তা করতে হবে, (এক্ষেত্রে জাইকার পরামর্শ ও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে)।
বর্ষাকালে কৃষক যেন কর্মহীন না থাকে তাই বর্ষা মৌসুমেও ভাসমান সবজি চাষসহ হস্তশিল্প, কুটির শিল্পের উপর প্রশিক্ষণ ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
হাওরাঞ্চলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় আরো বেশি জনবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন করতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোসহ সমকালীন আরো পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে, হাওরে জরিপ করা, জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধির সাথে মতবিনিময়, সভা–সেমিনারের মাধ্যমে জনশক্তি ও কর্মসংস্থানসহ ‘হাওর উন্নয়নমুখি‘ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সমাজসেবক, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশাজীবী ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন এবং প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপযোগিতা যাচাইয়ে, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) মনিটরিং এবং হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে আরো বেশি গণমুখি হতে হবে।
হাওরের নদী খাল বিলগুলো পুনঃ খনন করে হাওরাঞ্চলবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলে, সচল হবে দেশীয় অর্থনীতির চাকা, সমৃদ্ধ হবে দেশের খাদ্য ভাণ্ডার, কর্মমুখি হবে বিপুল জনসম্পদ, উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার।