নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে করা হচ্ছে আসামি। কিন্তু আসামির তালিকা থেকে বাদ যাননি যুবদলের কর্মীও। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৭ মাস কারাভোগ ও ১০ দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে নির্যাতনের শিকার যুবদলের কর্মী রুহুল আমিনকে ছাত্রলীগকর্মী সাজিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় নিজের নাম দেখে যুবদলকর্মী রুহুল আমিন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতি করেছি। বর্তমানে যুবদলের একজন কর্মী। শেখ হাসিনা সরকারের পুরোটা সময়ই আমি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। ২০১৪ সনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে কিশোরগঞ্জ সদর থানা ও নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। কিশোরগঞ্জ সদর থানার মামলায় পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। ১৭ মাস কারাভোগের পর তিনি ছাড়া পান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং এ আন্দোলনে তার ভাতিজা জিহাদুল ইসলাম নিরব চোখে গুলিবিদ্ধ হন। গুলিতে তার বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়ার তত্বাবধানে মামলাগুলো করা হচ্ছে। মোটা অংকের টাকায় তারা মামলা বাণিজ্য করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বরাবরে এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। অভিযোগটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় গত সোমবার কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন লতিবাবাদ উত্তরপাড়া গ্রামের শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুজন মিয়া। মামলায় ৯০ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০০/২৫০ জনকে আসামি করা হয়। যুবদলকর্মী রুহুল আমিন এই মামলার ৩৬ নম্বর আসামি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মামলার বাদী সুজন শহরের গৌরাঙ্গ বাজারে গিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখেন। এ সময় তিনিসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল জানান, সুজন একটি মামলা করেছে এবং অনেক নিরীহ লোকদেরকেও আসামি করেছে শুনেছি। মামলার বিষয়গুলো সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এবং আইনি বিষয়টা সহ সভাপতি এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা হেন্ডেল করছেন বলে জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা এ প্রসঙ্গে বলেন, অহেতুক নিরপরাধ কাউকে যেন মামলায় জড়ানো না হয়, সে বিষয় নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। মামলার বিষয় দেখভাল এবং আসামি যাচাই বাছাই সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামই করছেন উল্লেখ করে নিজেদের অজান্তেই কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি। সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবীর পরামর্শে তিনি নিজেই মামলার আইনি বিষয়গুলো দেখছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি দেখে দেওয়ার পরও ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কাউকে কাউকে আসামি করা হচ্ছে। বিষয়গুলো ওসি সাহেবকে বলেছি, চার্জশিট থেকে যেন তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়।