নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ধোবাজোড়া গণ্যহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকার কোরবান আলীর নেতৃত্বে পাকবাহিনী এ গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতাকামী দুটি পরিবারের ১৭ জন নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী ধোবাজোড়া গ্রামের আবদুল মজিদ ভূইয়ার বাড়িতে প্রথমে হামলা চালিয়ে আবদুল মজিদ ভূইয়া, তার দুই ছেলে এডভোকেট আবদুল মতিন ভূইয়া ও আবদুর রাশিদ ভূইয়া, মজিদ ভূইয়ার ভাগ্নে আবদুল মান্নান ভূইয়া ও লোকমান হোসেন ভূইয়া, পরে আবদুল গণি ভূইয়ার বাড়ি থেকে গণি ভূইয়া, রোকন উদ্দিন ভূইয়া, জাহের ভূইয়া, ছিদ্দিকুর রহমানসহ ১৭ জনকে ধরে নিয়ে যায় এবং দুটি বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।
এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে শহীদ আবদুল মজিদ ভূইয়ার নাতি ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর ভাতিজা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আলম মানিক জানান, আমার নানা আবদুর মজিদ ভূইয়াসহ ১৭ জনকে ধরে ইটনায় পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। তাদের লাশও আর পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ড থেকে তার পিতা মো. আবদুল গনি, বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রফিকুল আলম রতন ও মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবদুস শাহিদ ভুঞা সৌভাগ্যজনকভাবে বেঁচে যান। শফিকুল আলম মানিক এই গণহত্যার সময় ভারতে থাকায় বেঁচে যান। তিনি জানান, আবদুল মান্নান ভূইয়ার ছাত্র ছিলেন রাজাকার কোরবান আলী। শিক্ষককেও রেহায় দেয়নি রাজাকার কোরবান আলী। সেদিনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আজও বেঁচে আছেন ধোবাজোরা গ্রামের ইদ্রিস আলী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আলম মানিক আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন ঘাগরা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান রাজাকার অলি নেওয়াজ ভূইয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার কোরবান আলীকে কিশোরগঞ্জ থেকে ধরে মিঠামইনের কেওয়ারজোরে নিয়ে হত্যা করে। রাজাকার অলি নেওয়াজ ভূইয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান তিনি।
উল্লেখ্য, শহীদ আবদুল মজিদ ভূইয়া ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর বড় ভাই মো. আবদুল গনির শ্বশুর। ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর পরিবার ধোবাজোড়াতেই ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাটি অঞ্চলে আর কোন মুসলমান পরিবার এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়নি বলে তিনি মনে করেন।