নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচ বছর চাকরিকালীন নয় মাসও বিদ্যালয়ে যাননি। মেডিকেল ছুটির নামে বছরের পর বছর ধরে লাপাত্তা তিনি। বিদ্যালয়ে নিয়মিত না যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী তার নামও ভুলে গেছে।
ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম মেহবুবা রায়না।
করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রায়না ২০১৬ সালের শুরুতে চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। যোগদানের প্রায় তিনমাস পরই মেডিকেল ছুটিতে চলে যান তিনি। ২০১৬ সালের ২ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১৩ দিন বিনা বেতনে মেডিকেল ছুটি ভোগ করেন তিনি। ছুটি কাটিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আবারও মেডিকেল ছুটি। এমনিভাবে বেশ কয়েকবার মেডিকেল ছুটি কাটান তিনি। পরে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। সেটাও অনিয়মিত।
বার বার মেডিকেল ছুটির অজুহাতে তিনি গোপনে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে মাস্টার্স ডিগ্রিতে পড়ছেন।
বিদ্যালয়ে গিয়ে অন্য শিক্ষকদের কাছে রায়নার বিষয়ে জানতে চাইলে সহজে কেউ মুখ খুলতে চাননা। তবে রায়না বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, সেটা সবাই অবগত বলে জানান। কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারা মেহবুবা রায়না নামে কোন শিক্ষিকাকে চিনেনা বলে জানায়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসাদুছ ছামাদ জানান, রায়নার মেডিকেল ছুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিষয়টি তিনি জানলেও ডাক্তারের সার্টিফিকেট থাকায় কিছু করা যাচ্ছেনা।
করিমগঞ্জের সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) রফিকুল ইসলাম জানান, রায়না যোগদানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভালভাবে চাকরিটা করছেননা। তিনি কিছুদিন পর পরই মেডিকেল ছুটিতে চলে যান। ডাক্তার সার্টিফিকেট দিলে কিছুই করার থাকেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তার অনিয়মিত থাকার বিষয়টি একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানান তিনি। সবশেষ ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত মেডিকেল ছুটি কাটান রায়না। করোনাকালীন সময়ে তিনি একবার এসে যোগদানও করেন। করোনাকালে ক্লাশ বন্ধ থাকলেও ক্লাশের বাইরে কিছু কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু রায়না সেটাতেও অংশগ্রহণ করেননি বলে জানান এটিইও। করোনার বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলা হলেও বিনা নোটিশে চারদিন অনুপস্থিত থাকেন রায়না। পরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এটিইও বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে রায়নাকে না পেয়ে তার বেতন বন্ধসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর বিভাগীয় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায়নার ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়। এরপরও তাকে বিদ্যালয়ে ফেরানো যায়নি।
করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মফিজুল হক রায়নার বিষয়ে জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে শোকজ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে রায়না যে জবাব দিয়েছেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, এ বিষয়ে বেতন বন্ধসহ বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সুপারিশ করা হয়েছে। বার বার মেডিকেল ছুটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনিও ডাক্তারের সার্টিফিকেটের অজুহাত দেখান। কিন্তু প্রকৃতই তার মেডিকেল ছুটি প্রয়োজন কিনা, সেটা যাচাইয়ের জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করার কোন প্রক্রিয়া আছে কিনা জানতে চাইলে সেটি আগেই করা উচিত ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা মেহবুবা রায়নার মতামত জানতে মুঠোফোনে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন কেটে দেন। এক পর্যায়ে এ প্রতিবেদকের ফোন নম্বর ব্লক করে দেন। পরে তার হোয়াটস অ্যাপ নম্বর ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বার্তা পাঠালেও কোন জবাব দেননি রায়না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক জানান, রায়নার বিষয়ে বিভাগীয় সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।