যশোর থেকে সংবাদদাতা: বেসরকারি শিক্ষক–কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা দেরিতে পাওয়ার কারণ জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক–কর্মচারী সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহম্মদ সাদী। তিনি বলেছেন, শিক্ষক–কর্মচারীদের প্রতিমাসে অবসরের চেক ছাড়তে প্রয়োজন ৯০ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের কাছ থেকে কর্তনের টাকায় প্রয়োজনের অর্ধেকও আসছেনা। এ অবস্থা নিরসনের জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা অবসর কল্যাণ ফান্ডে দিয়েছেন। বর্তমান অবসরে যাওয়া শিক্ষক–কর্মচারীরা ২ বছর ১০ মাস পর অবসরের টাকা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
শনিবার যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ভরতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে প্রাপ্তি ও প্রত্যশা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন রচনা করেন, স্বপ্ন দেখান এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। তার দেখানো স্বপ্নের পথে বাংলাদেশের বেসরকারি লাখ লাখ শিক্ষকের দুর্দশা ও বিড়ম্বনা দূর করতে অবসর বোর্ড কাজ করছে। শিক্ষকবান্ধব নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ এমপিওভূক্ত বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রতি সদয় দৃষ্টিতে তাকাননি। তিনি শিক্ষকদের কল্যাণে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষকরা এখন অবসরে গেলে তজবি জায়নামায নিয়ে বাড়ি যেতে হয়না। শিক্ষকরা বর্তমানে একটি পর্যায়ে চলে এসেছেন। আগে শিক্ষক–কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনার পিছনে দিনের পর দিন ঘুরতে হতো এবং ঘাটে ঘাটে নাজেহাল হতে হতো। এখন তাদের প্রাপ্য অর্থ নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। সরকার শিক্ষক–কর্মচারীদের সরকারিকরণ করতে কার্যক্রম শুরু করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শরীফ আহম্মদ সাদী উপস্থিত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, এ মন্ত্রণালয়ে এখন ঘুষ লেনদেনের দিন শেষ। আপনারা অবসরের টাকা নিয়মের মধ্য থেকে বাড়িতে বসেই পাবেন। মধ্যস্বত্ত্বভোগীর কাছে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে ৬ মাসের মধ্যে অবসরের টাকা নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইএফটির মাধ্যমে চলে যাবে এবং মানবতার জননী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা প্রাপ্তির দীর্ঘ অপেক্ষার যন্ত্রণা দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বরগুনা তালতলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির সভাপতি ড. মিজানুর রহমান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বালিয়াডাংগা খানপুর কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান শাহিন, গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রিজাউল করিম, খামারবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নিমাই পাল, কুয়াদা ফাজিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল খালেক, কেশবপুর ডিগ্রী কলেজের গ্রন্থাগারিক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ৩৭ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক–কর্মচারীর মাঝে ইএফটির মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা বিতরণ করেন অধ্যক্ষ শরীফ সাদী।
অনুষ্ঠানস্থলে জাতীয়ভাবে আলোচিত শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস যিনি ৩৫ বছরের চাকরি জীবনে একদিনও ছুটি ভোগ করেননি, সেই অনন্য দায়িত্বশীল শিক্ষককে অবসর বোর্ডের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে অবসর বোর্ডের একটি তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়, যেখানে অবসরে যাওয়া শিক্ষক কর্মচারীগণ তাদের আবেদনের সকল তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে পাবেন।