নিজস্ব প্রতিবেদক: মেডিকেল ছুটির নামে বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষিকা মেহবুবা রায়না অবশেষে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। সোমবার (২৫ অক্টোবর) তার অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
রায়না কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক তার অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত না থাকার কারণে তাকে শোকজ করা হয়। কিন্তু তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় ১৭ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এরপর ১৮ অক্টোবর চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে ডাকযোগে আবেদন করেন রায়না। তিনি জানান, অব্যাহতির আবেদনে নানা অসঙ্গতি থাকায় সেটি গ্রহণ করা হয়নি। পরে সে বিষয়গুলো উল্লেখ করে রায়নাকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর রায়না স্বশরীরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে নতুন করে অব্যাহতির আবেদন করেন। তিনি আরো জানান, পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে চাকরি করা সম্ভব নয় বলে অব্যাহতির আবেদনে উল্লেখ করেন রায়না। এছাড়াও সরকারি বিধি মোতাবেক ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সর্বশেষ আহরিত সেপ্টেম্বর মাসের মূল বেতনের অর্ধেক টাকা জমা দেন তিনি। ১৮ অক্টোবর থেকেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে চান বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ অক্টোবর করিমগঞ্জ উপজেলার সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার বিষয়টি অগ্রায়ন করেন৷ ২৫ অক্টোবর রায়নার অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করে তাতে স্বাক্ষর করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সেই সাথে অব্যাহতি প্রদানের তারিখ হতে পদটি শূন্য বলে গণ্য হবে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, মেহবুবা রায়না ২০১৬ সালের শুরুতে চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। যোগদানের প্রায় তিনমাস পরই মেডিকেল ছুটিতে চলে যান তিনি। ২০১৬ সালের ২ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১৩ দিন বিনা বেতনে মেডিকেল ছুটি ভোগ করেন তিনি। ছুটি কাটিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আবারও মেডিকেল ছুটি। এমনিভাবে বেশ কয়েকবার মেডিকেল ছুটি কাটান তিনি। পরে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। সেটাও অনিয়মিত।
বার বার মেডিকেল ছুটির অজুহাতে তিনি গোপনে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে পড়ালেখা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে মাস্টার্স ডিগ্রিতে পড়ছেন।
সবশেষ ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সনের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত মেডিকেল ছুটি কাটান রায়না। করোনাকালীন সময়ে তিনি একবার এসে যোগদানও করেন। করোনাকালে ক্লাশ বন্ধ থাকলেও ক্লাশের বাইরে কিছু কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু রায়না সেটাতেও অংশগ্রহণ করেননি। করোনার বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলা হলেও বিনা নোটিশে চারদিন অনুপস্থিত থাকেন রায়না। পরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে রায়নাকে না পেয়ে তার বেতন বন্ধসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর বিভাগীয় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায়নার ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়। এরপরও তাকে বিদ্যালয়ে ফেরানো যায়নি।
এ বিষয়ে এর আগে নিউজ একুশেতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন। মামলা করার পর রায়না চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।