নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জে নরসিংদীর ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন হত্যায় আটক মোয়াজ্জিন হাফেজ জাকির হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পার্থ ভদ্র এর এজলাশে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দেয়া জবানবন্দিতে জাকির হোসেন দোষ স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মোখলেছুর রহমান। পরে বিচারকের নির্দেশে আসামীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি এলাকার একটি মসজিদ থেকে তাবলিগ জামাতের চিল্লারত হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যাব। নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ঝিগাতলা গ্রামের আব্দুল আওয়ালের ছেলে হাফেজ জাকির হোসেন গত পাঁচ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চুলা বাজার ভূঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদের মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ছাড়া স্থানীয় একটি মক্তবে ছাত্র পড়াতেন তিনি।
গত ৩ অক্টোবর রাতে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের পাশে নরসিংদীর গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনকে (৬৫) হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন হাফেজ জাকির। হত্যার ঘটনায় রমিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সালাম বাদী হয়ে জাকির হোসেনকে আসামী করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার ও র্যাব কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায়, গত পাঁচ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন জাকির। সেখানে থাকার সুবাদে বিদেশ ফেরত স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। হত্যার ১০ থেকে ১২ দিন আগে সস্তায় গরু কিনে দেওয়ার প্রলোভনে তিনি রমিজ উদ্দিনকে নেত্রকোণা জেলায় গরু কেনাবেচার স্থানে নিয়ে যান। পরে জাকিরের কথায় বিশ্বাস করে রমিজ ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা তোলেন। বিক্রির জন্য গরু নিয়ে আসবে এ কথা বলে গত ২ অক্টোবর রাতে রমিজকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় নিয়ে যান এবং অপেক্ষা করতে বলেন। রাত দেড়টার দিকে রমিজ উদ্দিনকে কৌশলে ওই এলাকার ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নিয়ে যান জাকির। এরপর রমিজ উদ্দিনের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। হাতুড়ির আঘাতে রমিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপালে, মুখে, বাঁ চোখের ওপর ও নিচে এবং মাথার বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে ৬ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।
সকালে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে অচেতন অবস্থায় গুরুতর জখম অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পাঞ্জাবির পকেটে থাকা কাগজপত্র দেখে পুলিশ তার নাম জানতে পারে। ঘটনার পর তার ছেলে বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ক্লু-লেস এ হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্তদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে। পরে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪-এর একটি দল হত্যাকারীকে শনাক্ত করে।