নিজস্ব প্রতিবেদক: ছিদ্দিক হোসাইন ঝালমুড়ি বিক্রেতা। স্ত্রী ফুলেছা বেগম অসুস্থ। তাদের দুই সন্তানের দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছেলে মো. আনিছুর রহমান স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেননা। ক্রেচে ভর করে তাকে চলতে হয়। মেয়ে আমেনা আক্তারও শারীরিক প্রতিবন্ধী।
আনিছ দর্শন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে। তার বোন আমেনা বিএ পড়ছেন কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের এই পরিবারটির ভিটেমাটি ছাড়া আর কোন সহায় সম্পদ নেই। বাবা ছিদ্দিক হোসাইন ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান। বাবার আয় এবং প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় লেখাপড়া করে এতদূর এগিয়েছেন আনিছুর ও আমেনা। ২০১৮ সনে মাস্টার্স পাশ করার পর থেকেই আনিছুর চাকরির জন্য চেষ্টা তদবির করতে থাকেন। ফেসবুকেও বিভিন্ন পোস্ট দিতে থাকেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা হচ্ছিলনা।
আনিছ জানান, বাবার ঝালমুড়ি বিক্রির টাকায় তিনবেলা কোন রকমে খাওয়াই হয়না। তার ওপর দুই ভাই বোনের লেখাপড়া। বিভিন্নজনের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে তারা পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। এক বেলা করে খেয়েও দিনের পর দিন পার করেছেন। একটি চাকরির জন্য সমাজের নানা পেশার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোন সাড়া মিলেনি। এ অবস্থায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের অসহায়ত্বের কথাও জানিয়েছেন তিনি। অবশেষে চাকরি নামক সোনার হরিণের দেখা পেয়েছেন তিনি। ফেসবুকের স্ট্যাটাস নজরে আসে পুলিশ নারী কল্যাণের (পুনাক) কেন্দ্রিয় সভানেত্রী জীশান মীর্জার। তিনি কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে ফোন করে আনিছুরের জন্য কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে পুনাক সভানেত্রীর সাথে কথা হয় কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির আহ্বায়ক লেলিন রায়হান শুভ্র শাহীনের। তিনি আনিছুরকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য পরিবহন সমিতির এই নেতাকে বললে তিনি সানন্দে রাজি হন। পরে পুলিশ সুপার আনিছুরকে ডেকে আনেন তার কার্যালয়ে। কম্পিউটারে পারদর্শী আনিছুরকে পরিবহন সমিতির অফিসে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দিতে রাজি হন পরিবহন সমিতির আহ্বায়ক শাহীন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে কেন্দ্রিয় পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার পক্ষ থেকে আনিছুরকে একটি কম্পিউটার উপহার এবং সড়ক পরিবহন সমিতির কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির নিয়োগপত্র হস্তান্তর করা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা পুনাকের সভানেত্রী মাহফুজা নাজনীন দিষার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার)। বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির আহ্বায়ক লেলিন রায়হান শুভ্র শাহীন।
এ সময় আবেগাপ্লুত আনিছুর রহমান বলেন, দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছি দিনের পর দিন। একটি চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েছি। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি। আজ পুনাক ও পরিবহন সমিতির পক্ষ থেকে চাকরি ও কম্পিউটারের ব্যবস্থা করায় তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির আহ্বায়ক লেলিন রায়হান শুভ্র শাহীন বলেন, আনিছুরকে চাকরি দিতে পেরে সমিতির সদস্যরা আনন্দিত। তিনি পুনাক সভানেত্রী ও পুলিশ সুপারের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে আনিছুরের মত মানুষেরা উপকৃত হবেন।
পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, সমাজে এমন আনিছুর আরও রয়েছেন। এমন চাকরিদাতাও রয়েছেন অনেক। আনিছুরের মত যারা অবহেলিত অবস্থায় রয়েছেন, তাদেরকে খুঁজে এনে একটু সহায়তা করলে পরিবার ও সমাজ উপকৃত হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশ একদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক সরকার (প্রশাসন), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম (অপরাধ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী (সদর), কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির সদস্য সচিব শেখ ফরিদ আহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
