নাঈম শেখ, নান্দাইল (ময়মনসিংহ) থেকে: আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক দূর এগিয়েছে বিশ্ব। বিজ্ঞানের কল্যাণে প্রায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কার। চিকিৎসা বিজ্ঞানও পিছিয়ে নেই। কিন্তু এতকিছুর পরও সচেতনতার অভাব ও অজ্ঞতার কারণে আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদ এখনও কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ। এমনই এক ঘটনা উঠে এসেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে।
জটিল ও কঠিন সর্বরোগের চিকিৎসার নামে ঝাড়ুপেটা ও ঝাড়ফুঁক দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করছে এক কিশোর কবিরা। গত তিন মাস ধরে চলমান এই অপচিকিৎসার আড়ালে স্থানীয় একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিদিন দূর–দূরান্ত থেকে সহজ সরল মানুষ এসে কথিত কবিরাজের নির্দিষ্ট বাক্সে নগদ টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছেন।
নান্দাইল উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের বীর কামটখালী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ১৪ বছর বয়সী কিশোর ছেলে হৃদয় মিয়া এ ধরনের চিকিৎসা করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কিশোরকে সবাই হুজুর বলে সম্বোধন করেন। হৃদয় মিয়ার পরিবার ও স্বজনদের দাবি ‘জ্বীনের মাধ্যমে’ এই কিশোর চিকিৎসা করছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিশোর কবিরাজের বাড়িতে অনেক মানুষের ভিড়। কথিত কবিরাজ একটি চেয়ারে বসে রোগী দেখছেন। উপরদিকে তাকিয়ে মুখে বিড়বিড় করে রোগীদের মাথায় হাত রেখে একটি ঝাড়ু দিয়ে শরীরে মৃদু ঝাড়ুপেটা করছেন। রোগীদের সাথে করে নিয়ে আসা বোতলভর্তি পানি ও তেলে ফুঁক দিচ্ছেন। তার পাশে রাখা কাঠের একটি বাক্সে নগদ টাকা পয়সা দিয়ে যাচ্ছে রোগীরা যার যার মত।
সকাল বিকাল পালা করে রোগী দেখেন এই কিশোর। আগত রোগীর মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।
স্থানীয়রা জানান, এই কিশোর এক সময় নিখোঁজ হয়ে যেত মাঝেমধ্যে। ওই সময় তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। আব্দুল মজিদ নামে এই কিশোরের এক আত্মীয় জানান, কবিরাজির মাধ্যমে মানুষের সেবা করবে এই শর্তে তাকে জ্বীনদের হাত থেকে ফেরত আনা হয়েছে।
বাড়িতে অনেক রোগীর ভিড় থাকলেও কেউ চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে কবিরাজ কিশোরের আত্মীয় স্বজনদের দাবি অনেক রোগী ভালো হয়েছে, কয়েকজনের দীর্ঘদিনের রোগব্যাধি সেরেছে।
উপজেলার চামটা গ্রামের শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী হাবিব মিয়ার (১০) অভিভাবক বলেন, ১৫ দিন ধরে হুজুরের কাছে আসছি। ঝাড়ুপেটা ও তেল–পানিপড়া দিয়েছেন হুজুর। হুজুর বলেছেন, আগামী এক মাস আরও আসলে অবস্থার উন্নতি হবে।
কিশোর কবিরাজ হৃদয় মিয়া জানায়, এসবে তার কোন হাত নেই। তারা (জ্বীন) সব করেন।
জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রশিদ বলেন, ‘এটা কুসংস্কার, সহজ–সরল মানুষদের এক ধরণের ধান্ধায় ফেলে প্রতারণা করা হচ্ছে।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল মনসুর সাংবাদিকদের জানান, কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।