ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২২
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫২ বছর

প্রতিবেদক
-
এপ্রিল ২৮, ২০২২ ১০:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আমাদের ধর্মান্ধ পশ্চাৎপদ সমাজ ব্যবস্থায় নারী সমাজের দৈন্যদশা উপলব্ধি করে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পথিকৃত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধসহ অন্যান্য বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে ২০২২ সালে ৫২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে

সারা দেশের এই কার্যক্রমের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা ০১/০৪/২০২২ খ্রিস্টাব্দ বিকাল .৩০ মিনিটে জাতীয় পতাকা সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা, শোভাযাত্রা, আলোচনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিনটি উদযাপন করে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা উক্ত প্রতিষ্ঠানের ঊষালগ্ন থেকেই অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ০৪ এপ্রিল থেকেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে আসছে। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার মহিলা পরিষদ শহর ছাড়িয়ে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক কাজের মাধ্যমে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। 

নারীর অধিকার বিষয়ে মহিলা পরিষদের রয়েছে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ১২টি পৃথক উপপরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় সংগঠনের বহুমুখী কার্যক্রম। যথাক্রমে :

১। সংগঠন উপপরিষদ

২। লিগ্যাল এইড উপপরিষদ

৩। আন্দোলন উপপরিষদ

৪। প্রশিক্ষণ, গবেষণা পাঠাগার উপপরিষদ

৫। রোকেয়া সদন উপপরিষদ

৬। প্রচার গণমাধ্যম উপপরিষদ

৭। প্রকাশনা উপপরিষদ

৮। আন্তর্জাতিক উপপরিষদ

৯। স্বাস্থ্য উপপরিষদ

১০। সমাজকল্যাণ উপপরিষদ

১১। পরিবেশ উপপরিষদ

১২। শিক্ষা সংস্কৃতি উপপরিষদ

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে নির্যাতনের শিকার নারীদের আইনগত পরামর্শ, তদন্ত, কাউন্সেলিং, সালিশি কার্যক্রম ছাড়াও মামলা পরিচালনা এবং মামলার রায় কার্যকর করার জন্য আন্দোলন করছে। এছাড়াও জনস্বার্থে মহিলা পরিষদ মামলা করে থাকে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের দিকে সালিশির মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য ৮৯ লাখ ৮২ হাজার ৬০১ টাকা দেনমোহর আদায় করা সম্ভব হয়েছে। ২০২১ সালে সালিশির মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় ১৮ লাখ টাকা দেনমোহর আদায় করা হয়েছে। 

এ দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বেগম সুফিয়া কামালসহ শক্তিশালী অনেক নারী নেত্রীকে আমরা বিগত দিনে হারিয়েছি। তারা পৃথিবীর অধ্যায় শেষ করে ওপারে চলে গেলেও তাদের আদর্শের পথ ধরে আমাদের অব্যাহত কার্যক্রমের মাধ্যমে এই মহীয়সী নারীদের আমরা স্মরণ রাখবো। এই প্রয়াসে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাবেক সভাপতি আয়শা খানমের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়েআয়েশা খানম পাঠাগারস্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

এই সংগঠনের পুরোধা ব্যক্তিদের মধ্যে হেনা দাস, বুলা ওসমান, বেলা নবী এবং  রাখীদাশ পুরকায়স্থের মতো নারী নেত্রীদের হারিয়ে আমার গভীরভাবে শোকাহত। ওনাদের আদর্শ আমাদের আগামীতে পথচলার পাথেয় হয়ে থাকবে। 

সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তুলি”- এই স্লোগানকে সামনে রেখে সংগঠনটি এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। সকল নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা নারী জাগরণের অঙ্গীকার নিয়ে জননী সাহসিকার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭০ সালের এপ্রিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়এরপর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামাল বাঙালি নারীদের আলোকবর্তিকা হয়ে অদ্যাবধি তার রেখে যাওয়া আদর্শের মশালের প্রজ্জ্বলিত শিখায় সারা বাংলায় আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। 

সময়ের চক্রধরে নারী আন্দোলনের পরিসীমা বিস্তৃত হয়েছে। নারীরা আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।  রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেছিলেন,’ মেয়েদের স্বাধীনতা কেউ দিয়ে দেবে না, আদায় করে নিতে হবে। পুরুষশাসিত সমাজ শতাব্দীকাল ধরে মেয়েদের পায়ে যে বেড়ি পড়িয়ে রেখেছে, তা ভাঙতে হলে সচেতন লড়াই দরকার। স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচার নয়, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। নিজেকে মানবিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করা।

কালক্রমে আমাদের ভাষা আন্দোলন, সামাজিক সংস্কার, প্রগতির আন্দোলনের প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্বের এক অনন্য সংযোজন আজকের বাংলাদেশ মহিলা পরিষদএর প্রতিষ্ঠা। ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে জেলায় জেলায় যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, তখন তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিল নারী। পরে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের এপ্রিল সংগ্রাম কমিটি থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাম সংস্করণের মাধ্যমে এই সংগঠনের নাম হয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সেই থেকে অদ্যাবধি নারীপুরুষের সমতাভিত্তিক অধিকার আদায়ে একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছে এই সংগঠন

স্বাধীনতার পর দেশে একে একে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্ম হয়। দেশের আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানের দাবি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি, জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে ঐসকল সংগঠন নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে ধরনের সংগঠিত প্রয়াস নতুন সংযোজন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে মহিলা পরিষদের নেতৃত্বে নারীদের সাহসী ভূমিকার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। প্রথমে ঐক্যবদ্ধ নারী আন্দোলন বর্তমানে মহিলা পরিষদের নেতৃত্বে ৬৭টি সংগঠন মিলিতভাবে সোশ্যাল অ্যাকশন কমিটি বা সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে সব ধরনের অন্যায় সংকটের বিরুদ্ধে জোরদার কর্মসূচি গ্রহণ করছে

বাংলাদেশে প্রগতিশীল নারী সংগঠন বলতে এখন প্রধানত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদকেই বোঝায়। প্রথমদিকে মহিলা পরিষদের কাজ ছিল সারা দেশে শাখা গঠন করে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সভা, মিছিল, আন্দোলন করা। নারীশিক্ষার প্রচারপ্রসার ঘটানোর পাশাপাশি পরিবারে নারীকে পরিবারকে সচেতন করা। নিরাপদ মাতৃত্বসহ নারীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ১৯৭৪ সালে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছিল মহিলা পরিষদ। আশির দশকে এর সঙ্গে যুক্ত হয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন। নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার, ধর্ষণের শিকার, এসিডদগ্ধ নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে মহিলা পরিষদ গভীরভাবে অনুধাবন করে তাদের সংগঠনের নিজস্ব একটি আশ্রয়কেন্দ্র থাকা দরকার। কবি সুফিয়া কামালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মহিলা পরিষদের উদ্যোগে তখন বেগম রোকেয়ার নামে গঠন করা হয় নির্যাতিতদের আবাসন আইনি সহায়তাকেন্দ্র রোকেয়া সদন। একে একে শুরু হয় ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড, পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার বিয়ের রেজিস্ট্রেশন, সম্পত্তিতে তাদের সমান অধিকারের দাবিতে জোরদার আন্দোলন। নব্বইয়ের দশকে মহিলা পরিষদের কার্যক্রমের ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে স্থান সংকুলানের অভাব দেখা দেওয়ায় সমাজের সহমর্মী, শুভানুধ্যায়ী দানশীল অধিকারসচেতন ব্যক্তিদের উদ্যোগে সেগুনবাগিচায় নিজস্ব জায়গায় ভবন নির্মাণ করে নামকরণ করা হয়সুফিয়া কামাল ভবন

এখনো পরিষদকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১এর পূর্ণ বাস্তবায়ন, সম্পত্তিতে নারী অধিকার, নারীপুরুষের সমতার লক্ষ্যে জাতীয়, আন্তর্জাতিক সব সনদ সিডও সনদের দুটি সংরক্ষণ তুলে এর পূর্ণ যথাযথ বাস্তবায়নে। মহিলা পরিষদ বিশ্বাস করে, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সমান মজুরি, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠাই মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম প্রথম শর্ত। সরকার জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়নের দিকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ রাখলেও দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি সামাজিকরাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়াকে বাধামুক্ত করাসহ উন্নয়নের অনেক শর্তই এখনো পূরণ হয়নি। ৪০টি মন্ত্রণালয়ে এখন জেন্ডার বাজেট হয়েছে। কিন্তু অনেক মন্ত্রণালয় অর্থ খরচ করতে পারে না। অর্থ বরাদ্দের পর নারীর জীবনে গুণগত মানে কী পরিবর্তন হয়েছে সেটি দেখার জন্য নেই মনিটরিং সেল

নারী নির্যাতন, উত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানির মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে চলছে। মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতন বন্ধে পারিবারিক সহিংসতা বিল-২০১০ পাস হওয়ার দাবিতে এতদিন যাবত আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল। জাতীয় সংসদে সেই বিল পাস হওয়ায় বর্তমানে এর সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে। নারীর মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান শর্ত নিরাপদ মাতৃত্ব। এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে নারীর মানবাধিকার পদে পদে বাধাগ্রস্ত হবে, বাধাগ্রস্ত হবে জাতীয় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি। এই সত্য সামনে রেখেই নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অগ্রগতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে আজকের মহিলা পরিষদ

কিন্তু নারী আন্দোলনের লক্ষ্য কি অর্জিত হয়েছে? এই বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি . ফওজিয়া মোসলেম বাসস সাথে আলাপকালে বলেন– “গত ৫২ বছরে যা করতে চেয়েছিলাম, তার সবটা করতে পারিনি। তবে  মৌলিক কাজটি করতে পেরেছি। তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল নারীরা সচেতন হোক। তাদের মধ্যে জাগরণ আসুক। তাদের মধ্যে মুক্তির আকাংখা তৈরি হোক। যেটা আমরা চেয়েছিলাম। সেটা হয়েছে।

তিনি বলেন, নারীরা আজ একটি সামাজিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নারীদের মধ্যে একটি জাগরণ তৈরি হয়েছে। মুক্তির আকাংখা তৈরি হয়েছে। যেটা আমরা সাধারণভাবে সকল নারীদের মধ্যে দেখতে পাই। কিন্তু দাবি আদায় হয়নি। সমাজে এখনো নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সমঅধিকার বা সমঅংশীদারিত্ব বলে যা বুঝি, সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বলা যায় যে, নারীর কাঠামোগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। 

১৯৬৯ সালে বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে সমাজের বিশিষ্ট নারীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে প্রথম কাজ শুরু করে মহিলা পরিষদ। তিনিই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নামকরণ করেন। শুরুর দিন থেকে দীর্ঘ ৫২ বছরের পুরোটা সময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য . ফওজিয়া মোসলেম। ২০২১ সালের জানুয়ারি সেই সময়কার সভাপতি আয়শা খানমের মৃত্যুর পর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন . ফওজিয়া মোসলেম। 

শুরুতে নারী আন্দোলনকে  যেভাবে দেখা হতো, এখন নারী আন্দোলনের বিষয় অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। এর সাথে নারীর নানা ইস্যু যুক্ত হয়েছে। নারীদের উপলব্ধির গভীরতাও তৈরি হয়েছে। শুরু থেকেই নারী আন্দোলনের আন্তর্জাতিক রূপের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো মহিলা পরিষদ। তবে তা সীমিত আকারে ছিল। পরবর্তীতে গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সাংগঠনিক যোগাযোগও বিস্তৃত হয়েছে। মহিলা পরিষদের কর্মপরিকল্পনায় এসেছে পরিবর্তন

. ফওজিয়া বলেন, নারী আন্দোলন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কাজেই এতে সমসাময়িক চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমসাময়িক চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে কর্মপরিকল্পনা এবং সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হলে, তাও আনা হবে।  তবে খুব একটা পরিবর্তন আনার প্রয়োজন দেখা দেয়নি। এটাকে আসলে পরিবর্তন না বলে, নতুন অন্তর্ভূক্তি বলা যায়। যেমন, আমরা সামাজিক মাধ্যমগুলোকে মহিলা পরিষদের কাজে ব্যবহার করতাম না।  আমরা ভাবতাম যে, এতে আমাদের গোপনীয়তা, নিয়মানুবর্তিতা নষ্ট হতে পারে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা যখন অনলাইন মিটিংগুলো করতে শুরু করলাম, সেটা সংগঠনকে বিশাল সহায়তা করেছে। করোনার সময় সংগঠনের টিকে থাকার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে অনলাইন যোগাযোগ।  

সময়ের  চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন মহিলা পরিষদ সভানেত্রী। তিনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনের কর্মসূচিতে নতুন নতুন ইস্যু যুক্ত হচ্ছে। আগে যেমন যৌতুক, বাল্যবিবাহ, সম্পত্তির অধিকার এগুলো নিয়ে কথা বলতাম। কিন্তু এখনতো নারীরা চাকরি করছে। নারীদের বড় একটা অংশ বাইরে যাচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে, তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলতে হবে। এখন নারী আন্দোলন নতুন চরিত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছে।  

সংগঠনটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ, শোভাযাত্রা, সেমিনার, ওয়েবনিয়ার, গণমাধ্যমে প্রচারণাসহ সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গত এপ্রিল শুক্রবার  কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। কেন্দ্র বিভাগীয় পর্যায় ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কার্যালয় রয়েছে। সেসব কার্যালয়েও  প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে

নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশের মহিলা পরিষদ সবসময় সাহসিকতার সাথে কাজ করছে। এত বছর সফলভাবে সার্থকভাবে সংগঠন যে পথ পাড়ি দিয়েছে তার জন্য প্রশংসার দাবিদার। তিনি এ সময় বলেন, যতদিন না নারীরা মর্যাদা পাবে, নারীদের আমরা মানুষ হিসেবে ভাবতে না শিখব, ততদিন বৈষম্যকে দূর করা সম্ভব নয়। এজন্য নারীকেও সচেতনভাবে এগোতে হবে, পরিবার থেকেই এই বৈষম্য দূরের কাজ শুরু করতে হবে

বাংলাদেশে বেশির ভাগ নারী এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনেক রকমের বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়, যাকে বৈষম্যকারীরা সহজাত বলে মনে করে। অবস্থার উত্তরণের জন্য সকল শ্রেণীপেশার নারী পুরুষসহ প্রত্যেকের জন্য সমান সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য এবং প্রকৃত ক্ষমতায়নের জন্য নারীদের অবশ্যই আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।

এপ্রিল-২০২২ শনিবার সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পেশাজীবি তরুণীদের সাথে অনলাইনে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করি, সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করিশীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি . ফওজিয়া মোসলেম

মহীয়সী নারী কবি বেগম সুফিয়া কামালের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তার রেখে যাওয়া অমূল্য আদর্শকে ধারণ করে সারা দেশের ৬১টি সাংগঠনিক জেলা শাখায় অসহায় , দুর্বল পশ্চাৎপদ নারীদের আস্থার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বীরদর্পে কাজ করে চলছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জয় হোক

লেখক: মাহফুজা আরা পলক

সংগঠক,

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জেলা শাখা, কিশোরগঞ্জ। 

তারিখ : ২৮.০৪.২০২২, বৃহস্পতিবার।

আপনার মন্তব্য করুন