ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন করাই ছিল তাদের অপরাধ। এ অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ জন। দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছিলেন তারা। কিন্ত এখন তাদের অনেকের খবর নেয়না কেউ। এমনকি ১৫ আগস্ট স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ জানানো হয়না বলে অনেকের অভিযোগ।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া আসাদুজ্জামান ফারুক বলেন, দিনটি ছিল ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী ছিল। ভৈরবের তৎকালীন যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে গোপনে আলোচনা করে শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ১৫ আগস্ট অতি গোপনে হাজী আসমত কলেজের নিউ হোস্টেলে মিলাদ, দোয়া ও কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়। এদিন বিকাল সাড়ে ৩ টার মধ্যে ১০/১২ জন মৌলভি উপস্থিত হয়ে কোরআন খতম শুরু করেন। একজন একজন করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ২২ জন নেতাকর্মী বিকাল ৪ টার মধ্যে কলেজের নিউ হোস্টেলে উপস্থিত হন। হঠাৎ করে প্রায় ৩০/৪০ জন পুলিশ নিউ হোস্টেলটি ঘেরাও করে দুতলায় উঠে পড়ে। হোস্টেলটি ছিল দুতলা। পুলিশ রুমে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং রাইফেলের বাট দিয়ে প্রথমে ফখরুল আলম আক্কাছকে আঘাত করতে লাগল। আর লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগল সবাইকে। পুলিশ বলছিল, “কুত্তার বাচ্চারা, বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদের আয়োজন করেছিস, এখন জেলে যেতে হবে। তারপর মৌলভিদেরসহ ২২ জনকে থানায় নিয়ে হাজতে রাখল। তবে ভৈরব থানা থেকে মৌলভিদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন থানা হাজতে থেকে তাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের মামলা দিয়ে তৎকালীন মহকুমা আদালতে চালান দেয়া হলো। এদিন গ্রেফতারকৃত ২২ জনের কোমড়ে রশি বেঁধে পাঠানো হয় রেলস্টেশনে। পরে আদালতে তারা জামিন চাইলে বিচারক তাদেরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কয়েকমাস কারাভোগ করার পর জেল থেকে ছাড়া পান তারা।
সেদিন যারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তারা হলেন ফখরুল আলম আক্কাছ (ভৈরব পৌরসভার সাবেক মেয়র), আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমানে সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, জজ মিয়া, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মাহাবুব আলম, আসাদ মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আতাউর রহমান, ফজলুর রহমান, আসাদুল হক শিশু, আজমল ভূঁইয়া, শাহজালাল হোসেন, সুবল চন্দ্র কর, দীলিপ চন্দ্র সাহা, দীজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, রসরাজ সাহা, আবদুল হামিদ, ইদ্রিস মিয়া ও মাহবুব।
এ বিষয়ে সেদিনের গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, আমরা সেদিন দুঃসাহসীকতার সাথে শাহাদাৎ বার্ষিকীর আয়োজন করেছিলাম। তিনি বলেন, এদেশে কোথাও বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। আমরা ভাবতেও পারিনি মিলাদ ও দোয়ার জন্য গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হবে। তখনকার সামরিক সরকারের নির্দেশেই তারা ২২ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন বলে জানান তিনি।