মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: আজ সেই ভয়াল ১ সেপ্টেম্বর। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের ধুবাজোড়া গ্রামের গণহত্যা দিবস।
১৯৭১সালের এই দিনে ধুবাজোড়া গ্রামে স্হানীয় রাজাকার ও আলবদরদের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী ২০জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বাড়ি ঘর।
বর্ষার শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, অষ্টগ্রাম ও নিকলী থানায় এসে পাকবাহিনী ক্যাম্প স্হাপন করে। তখন থেকে হাওরের গ্রামে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের তৎপরতা শুরু হয়। অপরদিকে নিকলী থানার (বর্তমানে মিঠামইন উপজেলার) ধুবাজোড়া গ্রামের হাজী মো. সওদাগর ভূইয়ার বাড়িতে গড়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প। এ খবর পৌঁছে যায় ইটনা থানার পাকহানাদারদের ক্যাম্পে। ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভোরে পাশের গ্রাম কান্দিপাড়ার কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার কোরবান আলীর নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থায় পাকবাহিনী নৌকায় করে ধুবাজোড়া গ্রামের দক্ষিণ হাটির চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাড়িতে ঢুকে দেড় শতাধিক লোককে আটক করে এবং আব্দুল গনি ভূইয়ার বাড়ি, হাজী মো. সওদাগর ভূইয়ার বাড়ি ও রউশন ভূইয়ার বাড়ি ঘরে তল্লাশি চালায়। পাক বাহিনী ও রাজাকারের দল গ্রামের মানুষের ওপর অমানুষিক অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। বর্ষাকাল থাকায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পালাতে পারেনি। রাজাকার ও আলবদররা গ্রামে লুটপাট শুরু করে এবং বাড়ি ঘরে অগুন ধরিয়ে দেয়। আটক লোকদের মধ্য থেকে বেছে বেছে নেতৃস্হানীয় ও বিশিষ্টজনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ইটনা থানায় তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় তাদের।
ধুবাজোড়া গ্রামের যে ২০ জনকে পাকহানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল, সেই শহীদ গ্রামবাসী হলেন আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া (আওয়ামী লীগ ঘাগড়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি), আব্দুল আজিজ ভূঁইয়া (শিক্ষক), আব্দল লতিফ ভূঁইয়া (শিক্ষক), আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া (মিঠামইন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক), আব্দুল গণি ভূঁইয়া (ইউপি চেয়ারম্যান), রমিজউদ্দিন ভূঁইয়া (ইউপি সচিব), সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া (শিক্ষক), এডভোকেট আবদুল মতিন ভূঁইয়া, আবদুর রাশিদ ভূইয়া (ছাত্র নেতা), আব্দুর রউফ ভূঁইয়া, রোকন (ছাত্রনেতা), রোকনুজ্জামান ভূইয়া (ছাত্রনেতা), জহিরউদ্দিন ভূঁইয়া, আবদুল খালেক ভূঁইয়া, নূর আলী ভূঁইয়া, বুধাই ভূঁইয়া, রমজান ভূঁইয়া, আবু জামাল (জাহের), চান্দু মিয়া ও সিরাজ মিয়া। তাদেরকে হত্যা করার পর ইটনার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের ভয়রা গ্রামে মাটি চাপা দেয়া হয়। পাক বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনেও আহত অবস্থায় বেঁচে যান ইদ্রিস আলী ও মজনু ভূঁইয়া।
শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। পেরিয়ে গেছে ৫১ বছর। কিন্তু ধুবাজোড়া গ্রামের এই গণহত্যার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আজও গড়ে ওঠেনি কোন স্মৃতিফলক, লিপিবদ্ধ হয়নি শহীদদের নামও।