সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন: সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) মোবাইল ফোনে কথা হয় কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত ইটনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকিকুর রেজা খানের সঙ্গে। কথা বলার সময় জানান, তিনি কর্মস্থলে রয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসের কর্মচারীরা জানান, তিনি স্কুল ভিজিটে রয়েছেন। পুনরায় ফোন করলে তিনি জানান,
করিমগঞ্জের চামটাঘাটে রয়েছেন, কর্মস্থলের দিকে আসতেছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফোনে অবহিত করলে তিনি এই কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানান, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলের বাইরে ছিলেন বলে তার কাছে স্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষা কর্মকর্তা সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার এ দুদিন অফিস করেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার আগেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন এবং সোমবার বিকালে অফিসে আসেন। আবার কোন কোন সপ্তাহে একদমই আসেননা।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। শিক্ষকরা জানান, রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে একহাজার টাকা করে ৭২ হাজার টাকা আদায় করেন তিনি। রাষ্ট্রপতির কথা বলে টাকা চাওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
আরও অভিযোগ রয়েছে ২০২১-২২ অর্থ বছরে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির সাব কম্পোনেন্ট নীড বেইজড ফার্নিচার কার্যক্রমের আওতায় মালামাল ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকার পুরোটাই আত্মসাত করেছেন। একই অর্থ বছরে বরাদ্দ করা শিক্ষা অফিসের অনাবাসিক ভবন মেরামত ও সংরক্ষণ খাতের ৪০ হাজার টাকা ভুয়া বিল ভাইচার তৈরি করে আত্মসাত করেছেন।
এদিকে কুলিয়ারচর উপজেলার জাকিয়া সুলতানা নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকার চিকিৎসার জন্য উপজেলার সকল শিক্ষকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে মোট ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু তাকে দেওয়া হয় মাত্র ১২ হাজার টাকা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে মোট ২ লাখ ১১ হাজার ৭৭৪ টাকা উত্তোলন করলেও জমা দেন মাত্র এক লাখ টাকা।
শিক্ষা কর্মকর্তা তার অনুগত কতিপয় শিক্ষককে দিয়ে একটি নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন বলেও শিক্ষকরা জানিয়েছেন। কোন শিক্ষক এসবের প্রতিবাদ করলে তার ওপর নেমে আসে শাস্তির খরগ। তবে তার অনুগত শিক্ষকরা দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। ইতোপূর্বে এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও রহস্যজনক কারণে কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আকিকুর রেজা খান অফিসে অনিয়মিত এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।