নিজস্ব প্রতিবেদক: পিত্তথলির পাথর অপসারণ করতে গিয়ে রোগীর পিত্তনালীও কেটে ফেলেছেন চিকিৎসক। এমন অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে।
কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর এলাকায় দি খিদমাহ জনতা হসপিটালের পরিচালক ডা. আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভিকটিম বিউটি আক্তারের স্বামী মো. মুজিবুর রহমান।
সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিউটি আক্তারের স্বামী মো. মজিবুর রহমান জানান, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকালে তার স্ত্রী বিউটি আক্তারের পিত্তথলির পাথর অপসারণ করতে দি খিদমাহ জনতা হসপিটালে নিয়ে যান। এদিন বেলা ১১ টার দিকে পিত্তথলিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর রিলিজ করে বাসায় নিয়ে যান রোগীকে। কিন্তু কয়েকদিন পরই রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর রোগীকে শহরের অন্য একটি ক্লিনিকে নিয়ে দেখান। সেখানকার চিকিৎসক এমআরসিপি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। সে রিপোর্টে ধরা পড়ে যে, তার পিত্তথলি অপরাশনের সময় পিত্তথলির পাশাপাশি পিত্তনালীও কেটে ফেলা হয়েছে। পরদিন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সেখান থেকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ২৬ সেপ্টেম্বর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করে পুনরায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভুল অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়েছে। স্ত্রীর স্বর্ণালংকার ও পৈত্রিক জমি-জমা বিক্রি করে তিনি এখন প্রায় সর্বস্বান্ত।
এদিকে স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে স্বামী মজিবুর রহমান দি খিদমাহ জনতা হসপিটালের পরিচালক ডা. আব্দুল মজিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে
বাড়াবাড়ি না করে এক লক্ষ টাকা দিয়ে আপোষ করতে বলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ডা. আবদুল মজিদ সার্জন না হয়েও অসংখ্য অস্ত্রোপচার করে যাচ্ছেন বলে শুনেছেন।
ভিকটিম বিউটি আক্তার (৪৬) বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার মো. আব্দুল মজিদ বলেছিলেন, কোন প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই ছিদ্র করে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হবে। পরে জানান, শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়ায় কেটেই করতে হবে। পরে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করেন তিনি নিজেই। কিন্তু পিত্তথলিতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে পিত্তনালীও কেটে ফেলেন তিনি। বিউটি জানান, বিগত একটি বছর যাবত খুব কষ্টে দিন পার করছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এমন ভুল চিকিৎসার শিকার যেন আর কেউ না হয়।
অস্ত্রোপচার নিজেই করেছেন স্বীকার করে দি খিদমাহ্ জনতা হসপিটালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, চিকিৎসা কখনো ভুল হয় না। সব চিকিৎসায় কমপ্লিকেশন আছে, হতে পারে। এই ভুল চিকিৎসা নিয়ে কখনো টাকা পয়সার আলোচনা হয়নি। রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে স্থানীয় কমিশনার একদিন কথা বলতে এসেছিলেন। আমি চিকিৎসার কাগজপত্র দেখতে বলছি। সার্জন না হয়েও অস্ত্রোপচার করেন কীভাবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি ভিত্তিহীন।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, ভুক্তভোগীর স্বামী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত ডা. আব্দুল মজিদ সার্জন চিকিৎসক কি না, জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, এ বিষয়টিও তদন্ত কমিটি দেখবে।