ঢাকাশুক্রবার , ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মিঠামইনে ‘অদ্ভুত’ মাদ্রাসা

প্রতিবেদক
-
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ ৩:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদকনিজস্ব জায়গা থাকা স্বত্বেও মাদ্রাসা স্থানান্তর করা হয়েছে পাঁচবার সুপারের ইচ্ছেমত যখন যেখানে সুবিধা হয়েছে, সেখানেই তুলেছেন মাদ্রাসার ঘর শিক্ষকশিক্ষার্থী আসেন মাঝে মধ্যে কিন্তু বেতন আছে ঠিকমতই এমনই এক ‘অদ্ভুতমাদ্রাসার সন্ধান পাওয়া গেছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে

মাদ্রাসাটির নাম শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের শ্যামপুর  গ্রামে মাদ্রাসার নামে নিজস্ব জায়গা রয়েছে কিন্তু মাদ্রাসার সুপার তার ইচ্ছেমত পাঠদান করে আসছেন বিভিন্ন স্থানে

মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয় ১৯৯৯ সালে পাঠদানের একাডেমিক স্বীকৃতি পায় ২০০৫ সালে এমপিওভূক্ত হয় ২০১০ সালে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিজস্ব জায়গা না থাকায় শ্যামপুর বড়হাটি মসজিদের পিছনে অস্থায়ীভাবে পাঠদান চলে পরে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত জজ মিয়া এক একর জায়গা দান করেন এক পর্যায়ে আয়ব্যয়ের হিসাব নিয়ে সভাপতির সাথে দ্বন্দ্ব বাধে সুপারের দ্বন্দ্বের জেরেই সভাপতির দেওয়া জায়গায় মাদ্রাসা স্থাপনে অসম্মতি জানান তিনি একদিন রাতের আঁধারে মাদ্রাসার সকল নথিপত্র নিজের বাড়িতে নিয়ে যান সুপার ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে মাদ্রাসার কার্যক্রম ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে সুপার নিজের বাড়ির কাছে ধলাই বগাদিয়া বাজারে অস্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করেন পর্যায়ক্রমে শ্যামপুর থেকে মাদ্রাসার ঘরগুলোও নিয়ে যান সেখানে  ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাজারে নামেমাত্র দুটো টিনের ঘর তৈরি করে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বেতনভাতা তুলে আসছেন ১৭ জন শিক্ষকের  ২০২২ সালের জানুয়ারি ঝড়ে ÐÐ হয় ঘরটি তখন পাঠদান বন্ধ থাকে ছয় মাস পরে একটা ঘর তুলে কার্যক্রম শুরু করেন বগাদিয়া গ্রামের হারিছ মিয়ার বাড়িতে পরবর্তী তিনমাস পাঠদান দেখানো হয় ধলাই উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি টিনশেড ঘরে তিনমাস কার্যক্রম চালিয়ে আবারও ঘর নির্মাণ শুরু করেন নিজের ফসলি জমিতে শ্যামপুরবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে গত সেপ্টেম্বর ঘর ভেঙে নিয়ে যান স্থায়ী জায়গায় পরদিন রাতে মাদ্রাসা সুপার বাদী হয়ে শ্যামপুর গ্রামের ৮২ জনের নাম উল্লেখসহ শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মিঠামইন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে ঘরটি পরিত্যক্ত দেখা গেছে ভিতরে একটি টেবিল, একটি ভাঙা চেয়ার আর পাঁচটি বেঞ্চ ছাড়া আর কিছুই নেই ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষকদের কারও দেখা মিলেনি

সুপার আমিনুল হক জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন শিক্ষক ২৭৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে তার দাবি উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশ যদিও সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থীশিক্ষক কাউকেই পাওয়া যায়নি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন দাখিল পরীক্ষা চলছে, আর মাদ্রাসা নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে জেনে শিক্ষার্থীরা আসেনি

সহকারী কৃষি শিক্ষক হাসান মোহাম্মদ ফরহাদ মাদ্রাসায় যোগদান করেছেন ২০০৫ সালে সর্বশেষ কবে এসেছিলেন বিষয়ে সঠিক বলতে পারেননা কেউ তবে চার বছর আগে তাকে একবার দেখেছিলেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল হক

নিয়মিত পাঠদান না থাকায় মাদ্রাসা ছেড়ে গেছেন অনেক শিক্ষার্থী কেউ কেউ পড়াশুনাও ছেড়ে দিয়েছেন ষষ্ঠ শ্রেণির সাবেক শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার জানান, শ্যামপুর মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সারা বছরে মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছিলেন অনেক সময় মাদ্রাসায় গিয়ে কাউকে না পেয়ে ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরেছেন পরে কোনমতে বছরটা শেষ করে শহরে গিয়ে একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি

শ্যামপুর গ্রামের আব্বাস উদ্দীন জানান, মাদ্রাসায় ১৭ জন শিক্ষক তিনভাগে ভাগ হয়ে মাদ্রাসা চালান একদিন  যে পাঁচজন আসেন, পরদিন আসেন অন্য পাঁচজন

স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনূর রশিদ বলেন, মাদ্রাসার অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করে তিনি নিজেও মামলার আসামি হয়েছেন

মাদ্রাসার সুপার মো.আমিনুল হক দাবি করেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি না হওয়ায় সভাপতি তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথাবার্তা বলতেন বাধ্য হয়ে মাদ্রাসা স্থানান্তর করেন তিনি নিয়মিত পাঠদান না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যা আর করোনার কারণে উপস্থিতি কমে গেছে

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য করুন