নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে তোষা পাট ও কেনাফ বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকালে উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে আয়োজিত মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল আউয়াল।
কিশোরগঞ্জ পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইমরান আলী, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রঞ্জন চন্দ্র দাস, কেনাফ বীজ উৎপাদন সমিতির সভাপতি রমজান আলী, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম কাজল, কৃষক জুলফিকার আলী, বকুল মিয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজেআরআই এর মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল আউয়াল বলেন, পলিথিন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। যা মাটির নিচে পুঁতে রাখলে চারশ বছরেও নষ্ট হয়না। তাই পরিবেশের স্বার্থে পলিথিন বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি পাটের তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাহলেই পাটের সুদিন ফিরে আসবে।
তিনি জানান, এ অঞ্চলে কেনাফ বীজের চাহিদা রয়েছে ১৩০ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ৩০ টন। আমরা কৃষকের দোরগোড়ায় কেনাফের প্রযুক্তি পৌঁছে দিচ্ছি, যাতে কৃষক কেনাফ চাষের প্রতি আগ্রহী হয়। ইতোমধ্যে এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানকার কৃষকেরা যেভাবে সাড়া দিচ্ছেন, খুব শিগগির করিমগঞ্জকে কেনাফের রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে এবং পাটের সোনালী ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে।
কেনাফ চাষের উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, কেনাফ খুবই পরিবেশবান্ধব। এক হেক্টর জমির কেনাফ ১৫ মেট্রিক টন কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং ১১ মেট্রিক টন অক্সিজেন ছাড়ে। কেনাফ চাষে নিড়ানী লাগে না, রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়, কেনাফের পাতা গবাদি পশুর (গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি) খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়, কেনাফ চাষীরা কেনাফের পাতার বিনিময়ে কেনাফ গাছ কর্তন করতে পারেন, কম খরচে আঁশ ছাড়ানো যায় এবং কেনাফের আঁশের দামও বেশি পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, বিজেআরআই এর মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল আউয়াল ইতোপূ্র্বে এখানকার কেনাফ চাষীদের মাঝে বিজেআরআই উদ্ভাবিত কেনাফের উচ্চফলনশীল এইচসি–৯৫ জাতের কেনাফ বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করেন। যাতে কৃষক কৃষাণী নিজেরাই উন্নতজাতের কেনাফ বীজ উৎপাদন করে অধিক পরিমাণে আঁশ উৎপাদন করে অধিক লাভবান হতে পারেন। গত ১ অক্টোবর তিনি করিমগঞ্জে কেনাফ বীজ উৎপাদন সমিতিরও উদ্বোধন করেন। সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৩৪ জন এবং পর্যায়ক্রমে সদস্য সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমিতির আওতায় প্রায় ২০ একর জমিতে কেনাফ বীজ উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ বিজেআরআই কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কিশোরগঞ্জ জেলায় ১৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট ও পাট জাতীয় ফসলের আবাদ করা হয়। যার মধ্যে ৯ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতেই আবাদ করা হয় কেনাফের।