নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আপনাদের কাছে আমার আহ্বান নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। আগামীতে একমাত্র নৌকা মার্কার সরকার আসলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। এই হাওর অঞ্চলে আমরা যে উন্নয়ন বাস্তবায়ন করছি, তা অব্যাহত থাকবে। কৃষি জমির ক্ষতি এড়াতে এখন থেকে হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড মাঠে বিশাল সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশের সম্পদ লুট করেছে। সেই সম্পদ বিদেশে পাচার করে এখন আরাম–আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। আর দেশের মানুষ যখন কষ্ট পায়, তখন তারা আরও কষ্ট দেয়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। যারা বোমা মেরে, আগুন দিয়ে মানুষকে হত্যা করতে পারে, তারা কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি–জামায়াত বা ২০ দলীয় জোট যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আর আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, ফসলের উৎপাদন বাড়ে, মাছের উৎপাদন বাড়ে, তরিতরকারী–ফলফুলের উৎপাদন বাড়ে, মানুষ খেয়ে পড়ে সুখে থাকে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। দুর্গম অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় মিঠামইন সদরের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ২৭৫ একর জমির ওপর নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে দুপুরে মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে রাষ্ট্রপতির বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। নিজের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়িতে দুপুরের খাবারে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুরের খাবারে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সাদা ভাতের সঙ্গে হাওরের ১৬ পদের মাছ, ডাল, রসমালাই দিয়ে আপ্যায়ন করেন রাষ্ট্রপতি। দুপুরে রাতাবোরো চাউলের সাদা ভাতের সঙ্গে রুই মাছ দোপেঁয়াজো, কাতল মাছ দোপেঁয়াজো, চিতল মাছ দোপেঁয়াজো, আইড় মাছ দোপেঁয়াজো, পাবদা মাছ দোপেঁয়াজো, গোলসা মাছ দোপেঁয়াজো, কালিবাউশ মাছ দোপেঁয়াজো, শোল মাছ ভুনা, বাইম মাছ ভুনা, চিংড়ি মাছ ভুনা, বোয়াল মাছ ভুনা, গ্রাস কার্প মাছ ভুনা, বাচা মাছ ভুনা, রিটা মাছ মাখা–মাখা ঝোল, পাঙ্গাস মাছ মাখা মাখা ঝোল, মশুর ডাল, সালাদ, মিষ্টি ও রসমালাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপ্যায়ন করেন রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার।
বিশ্রামের পর বিকাল ৩টায় মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে অংশ নেন তিনি। সমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে পৌঁছানোর সাথে সাথে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান তারা। বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে সমাবেশে ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
দুপুর ১ টার দিকে মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবদুল হকের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল। দূরের কয়েক হাজার কর্মী–সমর্থক আগেরদিন বিকালেই ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে মিঠামইনে পৌঁছান। রাতে তাঁবু টানিয়ে, অনেকেই মাঠে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করেন। নিজেরাই গরু জবাই করে ও খিচুরি রান্না করে আহার করেন।
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুৃর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম. এ আফজল প্রমুখ।