সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন: কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার চর হাজীপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী রতন মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তার স্বামীর পাঠানো ২৭ লাখ টাকা হোসেনপুরের বোর্ড বাজারে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জমা রাখেন। পাশাপাশি রোজিনার মা দুলেনারও তিন লাখ টাকা একই শাখায় জমা রাখেন। ডিপিএস হিসেবে জমা করার কথা বলে মাসে প্রতি লাখে একহাজার টাকা করে দেওয়ার কথা। কিছুদিন দিয়েও যাচ্ছিল। কিন্তু গত রবিবার থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং তালাবন্ধ। এজেন্ট আলমগীর হোসেন ও তার সহযোগীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
গত তিনদিন ধরে রোজিনা বোর্ড বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আসছেন। কিন্তু এজেন্টের দেখা পাচ্ছেননা। গতকাল মঙ্গলবার বোর্ড বাজারে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় রোজিনার। রোজিনা জানান, স্বামীর শ্রমে ঘামে পাঠানো ২৭ লাখ টাকা এবং তার মায়ের তিন লাখ টাকাসহ মোট ৩০ লাখ টাকা ডাচ বাংলা ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জমা করেছিলেন ডিপিএস হিসাবে। কথা অনুযায়ী প্রতি লাখে একহাজার টাকা করে দিয়েও যাচ্ছিল। কিন্তু গত রবিবার থেকে এজেন্ট উধাও এবং দোকান তালাবদ্ধ। কথা বলার এক পর্যায়ে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি। সৌদি আরবে থাকা তার স্বামী রতন এ ঘটনা শুনে পাগলের মত হয়ে গেছেন বলে জানান রোজিনা। এ অবস্থায় তিনি এখন কী করবেন বুঝতে পারছেননা।
রোজিনার মত একই এজেন্সিতে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন হোসেনপুরের হুগলাকান্দি গ্রামের আব্দুল মোতালিব, একই গ্রামের আবুল কাসেম রেখেছিলেন ১৪ লাখ টাকা, মোফাজ্জল হোসেন রেখেছিলেন ১০ লাখ টাকা ও জুবেদার পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ধুলিহর গ্রামের আবু কালামের ৮ লাখ টাকা, হাজীপুর গ্রামের রহিমা খাতুনের সাত লাখ টাকা, মগবুল হোসেন রেখেছিলেন সাত লাখ টাকা, চর কাটিহারি গ্রামের নিলুফা খাতুনের সাড়ে তিন লাখ টাকা, বীর কাটিহারি গ্রামের রৌশনারা খাতুনের দুই লাখ টাকা, একই গ্রামের সখিনার তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা, ধলাপাতা গ্রামের অজুফার এক লাখ টাকা, পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়া গ্রামের জ্যোৎস্নার এক লাখ ৫৫ হাজার টাকাসহ প্রায় চারশ গ্রাহকের ২০ কোটি টাকারও বেশি নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এজেন্ট।
গ্রাহকরা তিনদিন ধরে বোর্ড বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করছেন। গ্রাহকদের বেশিরভাগই প্রবাসী এবং প্রবাস ফেরত। গ্রাহকরা নিজেদের কাছে রাখা এজেন্টের দেওয়া চেক দেখিয়ে জানান, টাকা জমা রেখে এজেন্ট আলমগীর গ্রাহকদেরকে এসব চেক দিয়েছেন। প্রায় ৮/১০ বছর যাবত এখানে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করেন আলমগীর। শুরু থেকে অমায়িক আচরণের মাধ্যমে গ্রাহকদের মন জয় করেন তিনি। ধীরে ধীরে ডিপিএসে জমার বিপরিতে প্রতি লাখে একহাজার টাকা দেওয়ার ফাঁদ পাতেন। এতেই উদ্বুদ্ধ হন গ্রামের সহজ সরল গ্রাহকরা।
হুগলাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলাম মৃধা জানান, হোসেনপুরসহ আশপাশের প্রায় চারশ গ্রাহকের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকারও বেশি নিয়ে উধাও হয়েছে গেছে এজেন্ট আলমগীর ও তার সহযোগীরা। তিনি এর বিচার দাবি করেন।
গ্রাহকরা জানান, হুগলাকান্দি গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে আলমগীর তার পার্টনার বীর কাটিহারি গ্রামের কেনু মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া বোর্ড বাজারে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্সী চালু করেন। এখানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন হুগলাকান্দি গ্রামের রিটন মিয়া। বর্তমানে সকলেই গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের মোবাইল ফোন নম্বর ও বন্ধ।
ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এরিয়া ম্যানেজার রোকন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত সোমবার থেকে বোর্ড বাজারের এজেন্টের সঙ্গে তাদের যোগাগোগ বন্ধ রয়েছে। তিনি আরও জানান, এজেন্ট আলমগীর তার ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে উল্লেখ করে এরিয়া ম্যানেজার জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দশনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।