নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদকের আগ্রাসন রোধ করতে না পারলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে, সামাজিক অবক্ষয় ও অনাচার বাড়বে। এত শুধু মাদকাসক্তরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা, মাদক সকলের জন্যই বিপদ সংকেত।
কিশোরগঞ্জ প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আয়োজনে “মাদক প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি কার্যকরী পদক্ষেপ” শীর্ষক এক সেমিনারে আলোচকগণ এসব কথা বলেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সমীক্ষার (২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত) উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এরমধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ এবং ৭-১৮ বছরের কিশোরের সংখ্যা ৫৭ হাজার।
সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের একটি হোটেলে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ. ন. ম নৌশাদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল কাদির।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে সাড়ে তিন লাখ মানুষ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদকের প্রকার অনুসারে সবেচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গাঁজা ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ, অ্যালকোহল ২৭ দশমিক ৫০, ইয়াবা ১৫ দশমিক ২০, অপিয়ড ৫ দশমিক ৩০, ঘুমের ওষুধ ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। মাদক ব্যবহারকারীর মধ্যে পুরুষ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও নারীর সংখ্যা দশমিক ৬ শতাংশ। আর পেশা হিসেবে মাদক ব্যবহারকারীর হার শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এটি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাদক ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, মাদকের ৯০ শতাংশই ধরা পড়েনা। এছাড়া ইউএনওডিসির উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, দেশে বছরে শুধু ইয়াবা ট্যাবলেটই বিক্রি হয় ৪০ কোটির মত। প্রতিটি ২০০ টাকা হিসেবে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। মাদকাসক্তরা মাদকদ্রব্য কেনায় বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। মাদকাসক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৭ম। আর অবৈধ মাদক আমাদানিতে পাচার হওয়া মুদ্রার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন কিশোরগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের লেকচারার ডা. জাহেদ জুবায়ের খান, কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল্লাহ, কিশোরগঞ্জ জেলা স্মরণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া আক্তার প্রমুখ।
আলোচকগণ মাদকের ক্ষতিকর দিকসমূহ উল্লেখ করে মাদক প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু।
সেমিনারে কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।