সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন: কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মুকসেদপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম বিআরটিএ থেকে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লার্নার কার্ড (শিক্ষানবিশ) পান। লার্নার কার্ড পাওয়ার তিন মাস পর স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও তাকে দেওয়া হচ্ছেনা। আমিনুল ইসলামের অভিযোগ, এক টেবিলে গেলে বলে ঐ টেবিলে যান। এভাবেই দুই বছর ধরে ঘুরছেন। আকারে ইঙ্গিতে টাকা দাবি করা হচ্ছে। তবে ঘুষ দিয়ে স্মার্টকার্ড নিতে চাননা তিনি।
বিআরটিএ কিশোরগঞ্জ সার্কেলে এমন শত অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোন প্রতিকার হচ্ছেনা। অভিযোগ নিয়ে কেউ বিআরটিএ অফিসে গেলে সহকারী পরিচালক নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও করে চাঁদাবাজি মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন, অসদাচরণ করেন, এমনকি মারার জন্য তেড়ে আসেন বলেও ভূক্তভোগীরা জানান।
সহকারী পরিচালক সপ্তাহে দুদিন অফিস করেন বলে জানা গেছে। ভূক্তভোগীরা জানান, ঘুষ লেনদেনের কাজটি হয়ে থাকে অফিসের কতিপয় কর্মচারী আর দালালের মাধ্যমে। আরিফ নামে এক দালাল প্রায় প্রতিদিনই সহকারী পরিচালকের কক্ষে অবস্থান করে এবং অফিসের কম্পিউটারের চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয় তাকে। কর্মচারীদের চেয়ে অফিসে তার দাপট বেশি বলেও এক কর্মচারী জানান। অফিস সহায়ক মাহফুজের ঘুষ লেনদেনের একাধিক ভিডিও ক্লিপ সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ প্রসঙ্গে মাহফুজ কিছু বলতে রাজি হননি।
বিআরটিএ কিশোরগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদের ঘুষ, দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিষয়ে কিশোরগঞ্জের মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা শো–রুমের মালিকরা সড়ক ও সেতু মন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ করে পড়েছেন বিপাকে। আফ্রা মোটর্সের মালিক মামুন হাসান জানান, শো–রুমের ১২ জন মালিক সম্প্রতি মন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগের পর কোন প্রতিকার তো হয়ইনি, উল্টো তাদের বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল (বিএসপি) নম্বর ব্লক করে দিয়েছে। ফলে তারা বিক্রিত মোটরসাইকেল নিজেদের আইডি থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে পারছেননা। এছাড়া বিএসপি ডাটা না পাওয়ার অজুহাতে বেশ কয়েকজনের ফাইল ফেরতও দিয়েছে। অথচ কর্মকর্তার চাহিদামত যারা টাকা দিতে পেরেছেন, পূর্বের আইএস ডাটা থেকে তাদের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। শুধু তাই নয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার বিধান থাকলেও লার্নার কার্ডধারীদেরকে নিয়মিতই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে।
নিউ দিয়া টিভিএস এর পরিচালক রাকিবুল ইসলাম লিখন জানান, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে সহকারী পরিচালকের কাছে গেলে তিনি প্রথমেই নিজের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও করা শুরু করেন। ভিডিও করার কারণ জানতে চাইলে মারার জন্য তেড়ে আসেন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।
এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে এবং নবায়ন করতেও লাগে ঘুষ। টাকা দিয়ে নির্ধারিত সেমিনারে উপস্থিত না থেকেও অনেকের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে। গত ২৬ জুন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য ৮৪ জনকে সেমিনারে ডাকা হলেও সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন অন্তত ৩৫ জন। মোটা অংকের টাকায় তাদের লাইসেন্স নবায়ন করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেমিনারে উপস্থিতদের জন্য ৩০০ টাকা সম্মানী ভাতা ও দুপুরের খাবারেরর টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদেরকে দেওয়া হয়না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ প্রথমেই মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও করা শুরু করেন। দালাল আরিফের বিষয়ে তিনি জানান, সে প্রতিদিন তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে আসে। নিজের কক্ষের কম্পিউটারের চেয়ারে বসিয়ে রাখার বিষয়ে তিনি জানান, হয়তো ভুল করে কম্পিউটারের চেয়ারে বসে থাকতে পারে।
অনুপস্থিত থেকেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ বিষয়টি তার জানা নেই। অফিসে কোন অনিয়ম হচ্ছেনা দাবি করে তিনি বলেন, আগের কর্মকর্তাদের চেয়ে তিনি ভালো সেবা দিচ্ছেন। কর্মদিবসের তিনদিন ঘুরে তার দেখা না পেলেও নিয়মিত অফিস করেন বলেও দাবি করেন তিনি।