নিউজ একুশে ডেস্ক: পৃথিবীর অন্যতম অনিন্দ্য সুন্দর ও বিপজ্জনক পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট আমা দাব্লাম জয় করলেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী তানভীর আহমেদ শাওন। শনিবার (২ নভেম্বর) নেপালের স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার পর্বত শিখরে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়ালেন তানভীর। অভিযানের অপারেটর স্নোয়ি হরাইজন ট্রেক্স এন্ড এক্সপিডিশন নামক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ ভান্ডারির সূত্র দিয়ে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন তানভীরের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এর পক্ষ থেকে অভিযানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ফরহান জামান।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘হিমালয় কন্যা‘ নেপালের ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার এক অনিন্দ্য সুন্দর ও অন্যতম কঠিন পর্বত হলো ‘আমা দাব্লাম‘, যার অর্থ ‘মায়ের গলার হার‘। এর দুই দিকে ছড়ানো রিজকে কোনো এক মায়ের সন্তানকে আগলে রাখার মতো এবং মধ্যবর্তী গিরিশিরাকে মালার মতো মনে হয় বলে এই নামকরণ করা হয়। এর খাড়া রিজ ও ঢালু দেয়ালের জন্য অনেকেই একে ডাকেন ‘হিমালয়ের ম্যাটাহর্ন‘ নামে।
নেপালের খুম্বু এলাকায় অবস্থিত এই পর্বতের অনেকাংশে ৭০ থেকে ৯০ ডিগ্রি ঢালু পথ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে একে সম্মানের চোখে দেখেন পৃথিবীর বড় বড় পর্বতারোহীরা। এই পর্বত এতই সমীহের যে, এর ছবি দেখা যায় নেপালের এক রুপির ব্যাংক নোটে।
গত ১৩ অক্টোবর অভিযানের জন্য নেপালের পথে দেশ ছাড়েন তানভীর। ১৪ অক্টোবর প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পরদিন পৌঁছে যান রামেছাপ বিমানবন্দরে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেখান থেকে লুকলার নিয়মিত বিমান না চলাতে সেখানেই দুইদিন আটকে থাকতে হয় তাকে। পরদিন সড়কপথে যাত্রা করেন বেসক্যাম্পের পথে। কিছুপথ গাড়িতে এবং বাকিপথ হেঁটে ২৪ অক্টোবর পৌঁছে যান আমা দাব্লাম বেসক্যাম্পে। সেখান থেকে একবার ঘুরে আসেন ক্যাম্প-২ থেকে, যা উচ্চতায় স্বল্প অক্সিজেন থাকা আবহাওয়ায় শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য অতিব প্রয়োজনীয়। এরপর বেসক্যাম্পে নেমে এসে শুরু হয় উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১ নভেম্বর তিনি উঠে যান ক্যাম্প–২ এ। ২ নভেম্বর মধ্য রাতে শুরু হয় পর্বতের চূড়ার লক্ষ্যে তারা চূড়ান্ত যাত্রা এবং সকালে তিনি এই পর্বতশীর্ষ স্পর্শ করেন। পুরো পথেই তার সঙ্গে ছিলেন পর্বতারোহী বন্ধু ও গাইড বীরে তামাং। তানভীর ৫ম বাংলাদেশি হিসেবে অর্জন করলেন এই বিরল কীর্তি।
বেসক্যাম্পে নেমে আসতে তানভীরের দুদিন সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন অভিযানের ব্যবস্থাপক। তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য ক্লাবের পক্ষ থেকে সকলের নিকট দোয়া কামনা করা হয়েছে।
তানভীর আহমেদ শাওন কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের খড়মপট্টি এলাকার এডভোকেট তারেক উদ্দিন আহমেদ আবাদ ও শিরীন আহমেদ শিউলি দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান। ব্যক্তিগত জীবনে এক কন্যা সন্তানের জনক তানভীর কর্মরত আছেন ভিএফ এশিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র প্ল্যানার হিসেবে। ২০০৬ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এর বর্তমান কার্যকরী কমিটির অর্থ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।