নিজস্ব প্রতিবেদক: স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বোল আবহাওয়া থাকায় ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহে। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন ঈদগাহ শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮ তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত। জামাত শুরু হয় সকাল ১০ টায় । দীর্ঘ ১৫ বছর পর এবারের ঈদজামাতে ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জ বড় বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি একেএম ছাইফু্ল্লাহ।
শোলাকিয়া ঈদগাহের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু করা হয়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর ঘোষণা দেন।
ভোর থেকেই মুসল্লিরা দলে দলে শোলাকিয়া ময়দানে আসতে থাকেন। সকাল ৯ টার মধ্যেই শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও মুসল্লির ঢল নামে শোলাকিয়ায়। মাঠের ভিতরে জায়গা না পেয়ে অসংখ্য মুসল্লি পাশের সড়ক, সেতু, বহুতল বিল্ডিংয়ের ছাদসহ অলি গলিতে নামাজ আদায় করেন। এবার ছয় লাখের মত মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি এবং দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় এসেছেন। দূরের মুসল্লিরা ঈদের দু–একদিন আগেই এসে অবস্থান নেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য শহরের তিনটি স্থানে থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। নির্বিঘ্নে ঈদজামাত সম্পন্ন করতে শোলাকিয়া ঈদগাহে কয়েকস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। সেনাবাহিনীও বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। এ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিল। বিএনসিসি ও স্কাউটস সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ টু কিশোরগঞ্জ এবং ভৈরব–টু কিশোরগঞ্জ রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম, স্থানীয় গৃহবধ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হন।
জঙ্গি হামলার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদেরদিন শোলাকিয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ আদায় করেছেন ঈদগাহের মোতাওয়াল্লি দেওয়ান ফাত্তাহ দাদ খান মঈন। তিনি বলেন, বিগতদিনে অন্যায়ভাবে মোতাওয়াল্লির ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বিতর্কিত ইমামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এবার মোতাওয়াল্লির মনোনীত ইমাম মুফতি একেএম ছাইফুল্লাহকে পুনর্বহাল করায় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
ইমাম মুফতি একেএম ছাইফুল্লাহ বলেন, অতীতের ক্ষতগুলোকে আমরা সামনে আনতে চাইনা। সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এখন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। দেশ ও জাতির কল্যাণে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এদিকে আল্লামা মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মাদ নূরুল্লাহ (রহ.) প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জে মহিলা ঈদ জামাত সরযুবালা (এসভি) সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সানাউল্লাহ।