হাওর প্রতিনিধি: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কিশোরগঞ্জের হাওরের বিস্তীর্ণ বোরো ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। বেশ কিছু ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে থাকায় কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন টিকিয়ে রাখতে। এরপরও কৃষকের চোখের সামনে তলিয়ে গেছে অনেক ফসলি জমি।
এবার ইটনা, মিঠামইন, বাজিতপুর ও করিমগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু হাওরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরমধ্যে ইটনা উপজেলাতেই বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দাস জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে প্রথমে নিচু জমিগুলো তলিয়ে যায়। পানি ক্রমশ বাড়তে থাকায় সে পানি ঢুকে যায় মূল হাওরে। পানি যেদিক দিয়েই ঢুকেছে, কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণ করেছেন ফসল রক্ষায়। এরপরও শেষরক্ষা হয়নি অনেক হাওরের। চোখের সামনেই তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির ফসল। তিনি বলেন, পুরো উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধনপুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের আফাইন্নের হাওর আর চাচুয়ার হাওরের জমির ফসল একেবারে তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা এ দুটি হাওরের একটি জমির ধানও কাটতে পারেনি।
কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান মতি সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ১২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে মূল হাওরে এখনও পানি ঢুকেনি। ইটনার জিওলের বাঁধের পাশে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১ মিটার পানি বাড়লে মূল হাওরে পানি ঢুকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার সারারাত একটু একটু করে পানি বেড়েছে। আজকে হয়তো এটা স্ট্যাবল হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যাবে। এতে হাওরের ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, বাজিতপুর ও করিমগঞ্জ উপজেলার হাওরের ৩২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। হাওরের কৃষকদের সাথে কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সমস্ত জমির ধান ৮০ ভাগ পেকেছে, সে সকল জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য কৃষকদেরকে বলা হয়েছে। আবারও বৃষ্টি হলে বিভিন্ন হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশংকার কথা জানিয়েছেন তিনি।