ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নার্স রিমা প্রামাণিকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিরিজকান্দি এলাকার রিমার গ্রামের বিক্ষুব্ধ জনতা ইট-পাটকেল ছুঁড়ে হাসপাতাল ভবনের বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুর্জয় মোড় এলাকায় মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধন থেকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হানিফুর রহমান সুমনসহ অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে রায়পুরা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি তাপস বিশ্বাস, হিন্দু পরিষদের সদস্য প্রসেনজিৎ, মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিউটি বিশ্বাস, আঁখি রানী পাল, মোমেনুল ইসলাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা তাপস বিশ্বাস বলেন, রিমা প্রমাণিক জীবনের তাগিদে এই হাসপাতালে চাকরি করত। ঈদের আগে ছুটিতে সে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু ঈদের আগেরদিন কর্তৃপক্ষ তাকে ফোনে ডেকে এনে রাতে গলাটিপে হত্যা করে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় তাপস বিশ্বাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রিমার এমন মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ কিছু লোক এই কাণ্ড করেছে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ভৈরব পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মো. আল-আমিন জানান, হাসপাতালে নার্সের মৃত্যুর ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। সে ভোররাতে তার শয়নকক্ষে আত্মহত্যা করে। ঘটনায় মামলা করেছেন স্বজনরা। এমডি সুমন গ্রেফতার হয়েছেন। আইন অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চলবে। কিন্তু তারা আমাদের হাসপাতাল ভাঙচুর করে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। এই ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
ভৈরব থানার উপ পরিদর্শক আবদুর রহমান জানান, ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে হাসপাতালের এমডি সুমনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে আনতে আদালতে আবেদন করবে পুলিশ। আইনগত সব ব্যবস্থা নেওয়ার পরও নিহতের স্বজনরা মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাসপাতাল ভাঙচুর করেন, যা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ভোরে ভৈরবে ইউনাইটেড হাসপাতাল অ্যান্ড আর্থোপেডিক সেন্টার নামে বেসরকারি একটি হাসপাতালে রিমা প্রমাণিক (১৯) নামে এক নার্সের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা সেন্টু প্রামাণিক বাদী হয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হানিফুর রহমান সুমন (৪০), নার্স লিজাসহ (২৪) অজ্ঞাতনামা আরও তিন থেকে চারজনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ মঙ্গলবার ভোরে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতালটির এমডি হানিফুর রহমান সুমনকে আটক করে। পরে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, নার্স রিমা প্রমাণিক দুই বছর যাবত ওই হাসপাতালে চাকরি করতেন। ঈদের তিনদিন আগে তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যান। ঈদের আগেরদিন গত শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফোন করে ঈদেরদিন ডিউটি করতে তাকে হাসপাতালে আসতে বলেন।
ঈদের দিন ডিউটি করে রিমা নার্সদের থাকার রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। রবিবার ঈদের রাতে কোনো এক সময় হাসপাতালের কয়েকজন মিলে তাকে গলাটিপে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করে। পরে ভোরে নিহতের বাবাকে জানানো হয়, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরদিন সোমবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রিমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।