নিজস্ব প্রতিবেদক: করিমগঞ্জ থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে কিশোরগঞ্জ শহরের একরামপুর পর্যন্ত এই ১০ কিলোমিটার রাস্তা প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। একরামপুর থেকে শহরের বটতলা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা অটোরিকশায় যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিটেরও বেশি। প্রতিদিনই ভূক্তভোগী যাত্রীদের এমন অভিযোগ শোনা যায়। আবার ফুটপাত দখলে থাকায় সহজে হেঁটেও যাওয়া যায়না। যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা স্থবির থাকে কিশোরগঞ্জ শহর। যানজটে এখন অতিষ্ঠ মানুষ।
কিশোরগঞ্জ শহরের যানজটের প্রতিদিনের চিত্র এমনই। ফুটপাতগুলো দখল হয়ে আছে প্রভাবশালীদের দ্বারা। অদক্ষ চালক ও নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশা। অপ্রশস্ত রাস্তা। যানজট নিরসনে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাব। কিশোরগঞ্জ শহরে যানজটের জন্য এমনসব কারণকেই দায়ী করেছেন অনেকে।
কিশোরগঞ্জ বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। প্রভাবশালী মহল ফুটপাতে হকার বসিয়ে তাদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করে বলে তার অভিযোগ। পৌর মার্কেটে হকারদেরকে পুনর্বাসন করে ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি। তাছাড়া প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় শহরের বিভিন্ন মোড়ে অটোস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা যে যার মত করে ফুটপাত, মোড় দখল করে সুবিধা আদায় করছে। তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জে শিল্প প্রতিষ্ঠান বলতে তেমন কিছু নেই। ফলে বেকার যুবকদের বেশিরভাগই অটোরিকশা চালাতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ চালক। এসব অটোরিকশাও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। ফলে যানজট বাড়ছে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া বলেন, যানজট নিরসনে একসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি কমিটি ছিল। বর্তমানে এ কমিটির কোন কার্যক্রম নেই। শহরের বাইরের অটোরিকশাগুলো যেন শহরে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। এক্ষেত্রে শহরের বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে অটোস্ট্যান্ড করা হলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। ফুটপাত দখল করে হকার বসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য প্রায়ই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু পাঁচদিন বা সাতদিন না যেতেই আবারও দখল করা হচ্ছে। হকারদেরকে পৌর মার্কেটে পুনর্বাসনের কোন সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের জন্য নরসুন্দা নদীর তীরে হলিডে মার্কেট করে দেওয়া যেতে পারে। যানজট নিরসন শুধুমাত্র পৌরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয় দাবি করে মেয়র বলেন, এক্ষেত্রে ট্রাফিক, প্রশাসনসহ সকলের সমন্বয় দরকার।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে যানজট নিরসনে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সে কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম। এক্ষেত্রে পৌর মেয়রের বক্তব্য সঠিক নয় বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক এবং প্রশাসন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করে সুপারিশ করলে আমরা সহযোগিতা করতে পারি বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।
ওয়ান ইলেভেনের সময় শহরের স্টেশন রোড ও ঈশাখাঁ রোডের দুপাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট রাস্তা দখলমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল রাস্তার সাথে সেই ছয়ফুট রাস্তার সংযোগ না করায় সেগুলো আবারও দখল হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে যানজট নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ বাস্তবসম্মত কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলেও অভিযোগ অনেকের।