ঢাকামঙ্গলবার , ২৫ অক্টোবর ২০২২
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস ঐতিহ্য
  5. করোনা আপডেট
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রীড়া জগৎ
  8. জাতীয়
  9. তথ্য প্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. নারী অধিকার
  12. প্রবাস সংবাদ
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কিশোরগঞ্জে সুইস ব্যাংকের ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে লাখো এনআইডি সংগ্রহ

প্রতিবেদক
-
অক্টোবর ২৫, ২০২২ ৫:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুইসব্যাংকের টাকা এনে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এ জন্য সারা জেলাব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে চক্রটি। প্রথম ধাপে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছে। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে প্রচারণা চালিয়ে পরের ধাপে টাকাও নিচ্ছে।

চক্রের সদস্যদের রসালো কথা বার্তায় অনেকটা হিড়িক পড়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার। কেউ কেউ বলছেন, মানুষের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতই আচরণ করছে চক্রটি।

করিমগঞ্জ উপজেলার কাদির জঙ্গল ইউনিয়নের জাঙ্গাল গ্রামের গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, যখন শুনেছি সুদ ছাড়া এক লাখ টাকা করে ঋণ দেয়া হবে, তাই এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি। তিনিসহ তাদের বাড়ির পাঁচজনের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছেন এবং প্রতিটি কপির সাথে ২০ টাকা করে দিয়েছেন বলে জানান
তিনি।

একই গ্রামের গৃহবধূ সাফিয়া আক্তার বলেন, এক লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে এনআইডি কার্ডের ফটোকপির সাথে একহাজার করে টাকাও নিয়েছে আমাদের এলাকা থেকে। তাদের বাড়ির তিনজন এক হাজার করে টাকা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

জাঙ্গাল গ্রামের বাবুল মিয়া জানান, আমার বাড়িতে কয়েকদিন আগে এ এম ফজলুল কাদের (বাবুল দারোগা) এসে মিটিং করে গেছেন। সেই মিটিংয়ে তিনি বলে গেছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে কালো টাকা পড়ে রয়েছে, তা দেশে এনে আমাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে। এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হবে। প্রতি মাসে একহাজার টাকা করে কিস্তিতে সেই টাকা পরিশোধ করা হবে। তাই আমরা মসজিদে মাইকিং করে ভোটার আইডি কার্ড এলাকার লোকদের কাছ থেকে নিয়েছি।

এনআইডি কার্ড সংগ্রহে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রামের নারী ও তরুণীদের ব্যবহার করছে চক্রটি। বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো করছেন নারীদের। পরে সেখান থেকে শিক্ষিত ও স্মার্ট দেখে উপজেলাভিক্তিক নিয়োগ করা হচ্ছে এজেন্ট। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশিদের যে সকল কালো টাকা সুইসব্যাংকে জমা পড়ে আছে, সেগুলো কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ধার করে গরীব অসহায় কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনাসুদে বিতরণ করবেন তারা। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে জনপ্রতি দেওয়া হবে সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা। আর যারা মোটামুটি স্বাবলম্বী ও ব্যবসায়ী তাদেরকে এক লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা দেওয়া হবে। শর্ত হিসেবে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে কিস্তি দিলেই চলবে। কার্ড নেওয়ার পর আগে ঋণ দেওয়ার কথা বলে এক হাজার টাকা করেও নিচ্ছে অনেকের কাছ থেকে।

এ চক্রের সংগঠক করিমগঞ্জের পিটুয়া গ্রামের এ এম ফজলুল কাদের (বাবুল) এক সময় পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। তিনি জানান, আমাদের সংগঠনের নাম অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় সিটি কলেজের পাশে তাদের হেড অফিস। অফিস থেকে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এলাকা থেকে এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে পাঠাতে। সুইস ব্যাংকের কালো টাকা দেশে এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়া হবে। তাই আমরা এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ঢাকায়
পাঠাচ্ছি। ইতোমধ্যে তিনি করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার এনআইডি কার্ড ঢাকা অফিসে পাঠিয়েছেন বলে জানান। প্রতিজনকে ১ লাখ থেকে ১ কোটি টাকাও দেওয়া হতে পারে বলে অফিস থেকে বলা হয়েছে। এ ঋণ সুদমুক্ত হবে। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

তাড়াইল উপজেলার ধলা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, আমাদের এলাকার ফেরুনা নামে যে মেয়েটা এই সংগঠনে কাজ করে সে ঢাকায় থাকে। যাদের কাছ থেকে এনআইডি কার্ডের কপি নেন, তাদের মধ্যে শিক্ষিত এবং স্মার্ট দেখে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে সেই কর্মীর মাধ্যমে কার্ড সংগ্রহ করেন তারা। তিনি বলেন, বিশ্বাস অর্জনের জন্য আইডি কার্ডের ফটোকপি নেওয়ার সময় কারও সাথে আর্থিক লেনদেন করা হয়না। তাহলে টাকাটা নেয় কিভাবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দেওয়ার পর দ্রæত ঋণ পেতে যারা আগ্রহ প্রকাশ করে, তাদের কাছ থেকেই কৌশলে হাতে হাতে বা বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছে তারা।

জানা গেছে, কথিত অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে সংগঠনটির কিশোরগঞ্জের দায়িত্বে আছেন ফেরুনা আক্তার। তিনি থাকেন রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকায়। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা গ্রামে। তার সাথে কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি জানান, প্রতি শনিবার ঢাকা অফিসে বসেন তিনি। সংগঠনের চেয়ারম্যান তাকে কিশোরগঞ্জের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে মহিলাদের মাধ্যমে আইডি কার্ড সংগ্রহ করছেন। এখন আর নিজে মাঠ পর্যায়ে যান না। তার মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্তরাই কাজ করছে। এ পর্যন্ত জেলা থেকে লক্ষাধিক আইডি কার্ড কেন্দ্রীয় অফিসে জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তারা সবাই কিছুদিনের মধ্যেই বিনাসুদে ঋণ পাবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনাদের দোয়ায় কিশোরগঞ্জ থেকে লক্ষাধিক আইডি কার্ড সংগ্রহ করে দেওয়ায় অফিসপ্রধান খুশি হয়ে সুনামগঞ্জের দায়িত্বটাও তাকেই দিয়েছেন। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম জানান, মিথ্যা আশ্বাসে এনআইডি নেওয়া প্রতারণার শামিল। এক্ষেত্রে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ইতোমধ্যে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। শিগগির আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র রাষ্ট্রীয় সম্পদ। একজনের পরিচয়পত্র আরেকজনের কাছে থাকবে কেন? আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

আপনার মন্তব্য করুন